বাঙালিকে নিজস্ব উদারতা বজায় রাখার আর্জি ইলিয়াসের

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২১ জানুয়ারি:
“বাঙালি যেখানেই থাকুন, তাঁদের নিজস্ব উদারতা, পরম সহিষ্ণুতা বজায় রাখুন।” রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুনা সেন অডিটোরিয়ামে ‘ময়মনসিংহ প্রাক্তনী’-র অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই আবেদন করেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার জনাব আন্দালিব ইলিয়াস।

তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, আগে আমি যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলাম, অতীতকে ভুলো না। আবার আঁকড়েও ধরে থেকো না। বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাঙালি তার আড়াই-তিন হাজার বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সর্বদা বাঙালি নিজের বাঙালিত্বের পরিচয় দিয়েছে। প্রত্যেককে সম্মান জানিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে সব ভাষাকেই আমরা সম্মান জানাতে চাই। সবাইকে আলিঙ্গণ করার বৈশিষ্ট্য থেকে যেন আমরা বিচ্যুত না হই। বাঙালিত্বের মহান ধারা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।

এদিন মঞ্চে বাৎসরিক অনুষ্ঠানে ছিলেন উদ্যোক্তা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রতনু কুমার লাহিড়ী, সম্মানীয় অতিথি ডা: সুগত মোহন বসু, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়, প্রাণসঙ্গীতের প্রাণপুরুষ সঞ্জয় চক্রবর্তী প্রমুখ।

স্কুলের শেষ পরীক্ষায় সফল ছ’জন পড়ুয়াকে এ দিন স্বীকৃতি জানানো হয়। স্বাগত ভাষণে প্রতনুবাবু বিভিন্নভাবে যাঁরা এই অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁদের নামল্লেখ করে বলেন, “এই প্রাক্তনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কেবল দায় নয়, আমাদের দায়িত্বও। কৃতি পড়ুয়ারা আশা করি ভবিষ্যতে প্রাক্তনীকে দিশা দেখাবে। সবাই হাতে হাত না মেলালে প্রাক্তনীকে টিকিয়ে রাখা যাবে না।”

৭ বছর বাদে প্রাক্তনীর ডিরেক্টরি প্রকাশ, ১৭ জন প্রবীন-প্রবীনাকে শীতবস্ত্র দেওয়া প্রভৃতির কথাও জানান প্রতনুবাবু। সংগঠনের ৮০-ঊর্দ্ধ ১৭ জন সদস্যকে এ দিন সম্বর্ধনা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এঁদের মধ্যে মঞ্চে সম্বর্ধনা নেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন ৮ জন— সুজিত কুমার রায়, জয়ন্তী সান্যাল, গণেন্দ্র মাধব মৈত্র ভট্টাচার্য, রজত কে রায়, অপূর্ব কৃষ্ণ গোস্বামী, রতনমণি রায়, সুজিত দত্ত ও অশোক চক্রবর্তী।

স্মৃতিচারণে জয়ন্তী দেবী তাঁর আজীবন সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অতি সংক্ষেপে জানান। বলেন, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেমন্তবালা দেবীর জীবনী ও সাহিত্য নিয়ে পিএইচডি করিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও, দিদিমা ছদ্মনামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি লিখতেন। তার সঙ্কলন ‘রবী ও জোনাকি’।

অশোক চক্রবর্তী বলেন, এপার বাংলায় চলে আসার পর তিন বার আমি দেশে গিয়েছিলাম। প্রথম বার ১৯৭৪-এ। দেখলাম সব বিধ্বস্ত, ভাঙ্গাচোরা। ছাত্রজীবনে বাবার দফতরের পাশে বসে অঙ্ক করতাম। ১৯৯৪-তে স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে যখন গেলাম, মানসপটে ফিরে গেলাম সেই যুগে। ওদের দেখালাম অঙ্ক করার সেই জায়গাটা। বছর চার আগে আর একবার গেলাম। সব বদলে গেছে। এত ফ্ল্যাট উঠেছে যে আমার বাড়ির ভিতই খুঁজে পেলাম না। উন্নতি তো হবেই! হোক! এখন ৮২ বছর বয়স। আমরা দু’জনই পেনশনপ্রাপক। দুই মেয়ে, নাতনি সবার বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা সুখী। কিন্তু কিশোরগঞ্জ নামটা খবরের কাগজে দেখলে আমার মন লাফিয়ে ওঠে। আর রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অনেকে যেমন দেবতার নাম জপেন, আমি সেটা পারি না। বরং চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার শৈশবের সেই কিশোরগঞ্জ।

এ দিন পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃতি পড়ুয়ারা হলেন দেবর্ষি দত্ত, ঋদ্ধিমান ব্যানার্জি, কঙ্কনা জোয়ারদার, ত্রিদিব দত্ত, স্বস্তিকা মুখার্জি ও দেবরত্ন মজুমদার। ছিল সদস্যদের জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার প্রদানের আয়োজনও। এর আগে রবিবার প্রাক্তনীর সদস্য/সদস্যাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়। কলকাতার ডিসান হাসপাতালের সহযোগিতায় হয় এই আয়োজন।

এই অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে প্রাক্তনীর পক্ষে ‘ময়মনসিংহ রত্ন’ অভিধায় ভূষিত করা হয়। যদিও তিনি শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় আসতে পারেননি। তাঁর উদ্দেশে লেখা মানপত্র মঞ্চে পড়ে শোনানো হয়। প্রাণসঙ্গীত বিষয়ে আলোচনা করেন আচার্য সঞ্জয় চক্রবর্তী। পরিশেষে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আগাগোড়া আকর্ষণ বজায় ছিল প্রাক্তনীর অন্যতম কর্মকর্তা দেবব্রত গোস্বামীর সুচারু সংযোজনার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *