সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৩ অক্টোবর: বাঁকুড়া জেলার অযোধ্যা গ্ৰামের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো আজও সমান জনপ্রিয় স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে। নীলকর সাহেবের কাছ থেকে সম্পত্তি পেয়ে অযোধ্যায় জমিদারির পত্তন করেন। তারপর থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই পুজো আজও পরম্পরাগত ভাবে হয়ে আসছে।
এই জেলায় রাজপরিবার ও জমিদার পরিবারের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা পুজো যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে পারিবারিক সুপ্রাচীন দুর্গা পুজোও। এগুলি পরম্পরাগত ভাবে প্রাচীন প্রথা মেনে হয়ে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই পুজোগুলির আলাদা একটা আকর্ষণ রয়েছে। প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে অযোধ্যার রাজবাড়ির পুজো।
কথিত আছে নীলকর সাহেবদের দেওয়া সম্পত্তির থেকে অর্জিত আয় থেকে এই দুর্গা পুজো হয়ে থাকে। অযোধ্যার রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সু- সম্পর্ক ছিল শ্রীরামপুরের এক নীলকর সাহেবের। তিনি অযোধ্যায় সম্পত্তি কিনে নীলচাষ শুরু করেছিলেন।সেই নীলকর সাহেব মৃত্যুর সময় তার সম্পত্তির ৫০ শতাংশ রামমোহনবাবুকে দেন। নীলকর সাহেবের দেওয়া সেই সম্পত্তি দিয়ে অযোধ্যায় জমিদারির শুরু করেন। সেই সময়ে অযোধ্যা ছাড়াও হুগলি, বর্ধমান ও মেদিনীপুর সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৮৫টি মৌজার জমিদার হয়ে উঠেছিল এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। এছাড়াও সম্পত্তি ছিল কাশী, বেনারস ও বিহারের বিভিন্ন জায়গায়। এই জমিদার পরিবার জোর করে চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করেছে বলে শোনা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সু- সম্পর্ক বজায় ছিল। তবে এই পরিবারের জমিদারির বিপুল আয় ছিল। সেই আয় থেকে অযোধ্যা গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছিল জমিদার বাড়ি ও দেবোত্তর এস্টেট। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল দ্বাদশ শিব মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির, রাসমন্দির, ঝুলন মন্দির ও দুর্গা মন্দির। দুর্গাদেবী এখানে সিংহবাহিনী নন ব্যাঘ্রবাহিনী। এখানে দেবীর মুখ ছাঁচে নয়, বংশপরম্পরার প্রতিমা শিল্পীরা হাতে তৈরি করেন। তাই এই পরিবারের দেবীর মুখ আশেপাশের কোনও দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে মেলে না।
শ্রী শ্রী চণ্ডীতে মায়ের মূর্তির যেমন উল্লেখ আছে এখানে ঠিক সেরকমই মূর্তি তৈরি হয়। পালকি ও পুজোর উপকরণ তৈরি করা হয়েছিল রূপো দিয়ে। রাজকর্মী ও প্রজাদের ভিড়ে দুর্গাপুজো উৎসবের চেহারা নিত।এখনও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে একটা আকর্ষণ আছে। আগের মতো জৌলুষ হয়ত অনেকটাই কমে গেছে, তবুও জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে।