করোনা আতঙ্কে নিম্নগ্রামী অপরাধের গ্রাফ! বড় মামলার আসামী ছাড়া ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা ২৬ মার্চ: হঠাৎই যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়ায় গোটা শহরের অপরাধ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। লালবাজার সূত্রের খবর, একদিকে করোনা আতঙ্কে যেমন অপরাধের হার কমে গিয়েছে ঠিক তেমনি ভাটা পড়েছে গোয়েন্দাদের তদন্তের গতিতে। একই সঙ্গে খুব বড় মামলার আসামী না হলে তাদেরকে আর নিজেদের হেফাজতে অর্থাৎ পুলিশ হেফাজতে নিতে চাইছে না পুলিশ। বরং কখনও জেলে অথবা আদালত বা থানা থেকে জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু আচমকা এরকম বদল এর কারণ কি? গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, করোনা আতঙ্কের কারণে তা প্রভাব ফেলেছে পুলিশের স্বাভাবিক তদন্তের গতিপ্রকৃতিতেও। দেশে করোনা সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে এবং এবং কোথাকার কোন ব্যক্তি করনা সংক্রমিত হয়ে রয়েছেন সেটা বোঝা পুলিশের পক্ষে কোন মতেই সম্ভব না। ফলে চাকরি করতে গিয়ে বেঘোরে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলতে নারাজ বহু অফিসার। রবীন্দ্র সরোবর থানার এক অফিসারের কথায়, অপরাধীকে সামনে থেকে ধরে গ্রেফতার বা শায়েস্তা করা যায় এমনকি বুদ্ধিমান অপরাধী সঙ্গে বুদ্ধির লড়াই করা যায় কিন্তু করোনা সংক্রমিত রোগীর সঙ্গে লড়াই করা আইন রক্ষক দের পক্ষে সম্ভব নয়। বেহালা থানার এক অফিসার বলেন, পুলিশকে বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সাথে প্রতিদিন মেলামেশা করতে হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, আতঙ্ক নয়, স্বাস্থ্যবিধির কারনেই তারা আপাতত তদন্তের গতিতে লাগাম পরিয়েছেন। এছাড়া পরিস্থিতির কারণেও তাদের হালকা চালে চলতে হচ্ছে।

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, করোনা আতঙ্কের জেরে এমনিতেই শহরে অপরাধ ৮০% বেশি কমে গিয়েছে। মারপিট ধস্তাধস্তি অপহরণ মহিলাদের হেনস্থা মতো একাধিক অপরাধ আর হচ্ছে না । তবু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সদা তৎপর পুলিশ। সেই কারণে এই আতঙ্কের মধ্যেও পঞ্চসায়রে যুবক খুনে গ্রেপ্তার করা হয় পরপর অভিযুক্ত ৪ জনকে।

কিছু পুলিশ কর্মী ব্যারাকে হয়ে যাচ্ছেন আর কিছু পুলিশকর্মীকে নিয়মিত বাড়ি থেকে তুলে বাড়িতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ছাড়া কাউকে জোর করা হচ্ছে না। যতটা ছাড়া একদম চলবে না, ততজন পুলিশকর্মী থানা এবং লালবাজারের বিভাগে থাকছেন। যে মামলাগুলি কিছুদিন পরে তদন্ত করা যাবে সেগুলিকে আপাতত ধরে রাখতে বলা হয়েছে। যে ধরনের মামলার আসামী ছাড়া পেলে ক্ষতি হতে পারে, তাদের আপাতত পুলিশ হেফাজত থেকে জেলে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে আলাদাভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হতে পারে। পরে আদালতে আবেদন করে ফের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আইনি পথ খোলা রাখা হচ্ছে। এছাড়া বাকি অপরাধীদের ফের পুলিশি হেফাজতে নেয়ার জন্য আদালতে কোনরকম আবেদন রাখা হচ্ছে না। প্রয়োজনে থানা থেকে জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সূত্রের আরও খবর গত ৭ দিনে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ৩০০ টি বিভিন্ন ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে একই সময়ে সেখানে নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যা ছিল ৬৬০ টি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ তারিখের পর থেকেই শহরে অপরাধের সংখ্যা কমেছে।

২৪ মার্চ লকডাউনের প্রথম দিনে কলকাতা পুলিশ এলাকায় দায়ের হয়েছে মাত্রা ৩০ টি এফআইআর। যার মধ্যে ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে লকডাউন আইন অমান্য করার জন্য।পুলিশকর্তাদের কথায়, করোনা আতঙ্ক কিছু ছিঁচকে অপরাধীদের জন্য অবশ্যই যেন লাইফলাইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *