দুর্গাপুরে সেইলের স্কুলে সেফ হোম এবং এমএএমসি কারখানার অক্সিজেন প্ল্যান্ট, হাসপাতাল চালুর দাবি

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১১ মে: দেশজুড়ে করোনা মহামারী মারণ থাবা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের আকাল। সঙ্কট মোকাবিলায় তৎপার কেন্দ্র রাজ্য উভয় সরকার। ঘাটতি মেটাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বসানো হচ্ছে অক্সিজেন প্ল্যান্ট। সঙ্কট মোকাবিলায় এবার দুর্গাপুরের বন্ধ এমএএমসি কারখানার অক্সিজেন প্ল্যাণ্ট চালু এবং হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের দাবি উঠল। একই সঙ্গে সেইলের বন্ধ স্কুলে সেফ হোম চালুর দাবি উঠেছে।

প্রসঙ্গত, গত দুদশক আগে দুর্গাপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত মাইনিং এন্ড এলোয়েড মেশিনারি কর্পোরেশন (এমএএমসি) কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ৬র দশকে তৈরী হওয়া দুর্গাপুরের এমএএমসি কারখানায় মুলত খনিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরী হত। স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিক ছিল প্রায় ৬হাজার। ১৯৯২ সালে কারখানাটি রুগ্ন শিল্পের আওতায় চলে যায়। ওই সময় বহু শ্রমিককে স্বেচ্ছাবসরে বসিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি কাররখানাটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বহু শ্রমিক বেকার হয়ে যায়। শিল্পনগরীর বুকে কালো মেঘ নেমে আসে। পরবর্তীকালে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া, ভারত আর্থ মুভার্স ( বিইএমএল) ও ডিভিসি যৌথ কনসোটিয়াম কারখানাটি অধিগ্রহনের জন্য কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং কারখানার মেশিনারী সার্ভে করে। তাতে দেখা যায় কারখানার সমস্ত মেশিনপত্র ঠিক রয়েছে এবং পরে ২০ বছর পর্যন্ত কারখানায় উৎপাদন করা যাবে। পরে ২০১০ সালের ১৯ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত বিইএমএল, ডিভিসি ও কোল ইন্ডিয়ার যৌথ অংশীদারী কনসোটিয়াম ১০০ কোটি টাকার বিনিময়ে নিলামে কিনে নেয়। কনসোটিয়ামে ডিভিসির ২৬ শতাংশ, কোল ইন্ডিয়ার ২৬ শতাংশ ও বিইএমএলের ৪৮ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে। অংশীদারি বেশী থাকায় কারখানার তদারকির দায়িত্ব বিইএমএলের ওপর রয়েছে। এপর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক চললেও কারখানার উৎপাদন ও শ্রমিক নিয়োগ এককথায় কারখানা চালু করা বিশ বাঁও জলে।

সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় স্ট্রেনে ফের মহামারী দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে। লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এরাজ্যেও পিছিয়ে নেয়। হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট যেমন, তেমনই সঙ্কটজনক পরিস্থিতি অক্সিজেনের। ঘাটতি মেটাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকার। সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্পশহর দুর্গাপুরে একগুচ্ছ দাবি উঠল। বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত এমএএমসি কারখানার অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও হাসপাতাল চালুর দাবি উঠল দুর্গাপুরে।  আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, দেশজুড়ে গভীর সঙ্কট অক্সিজেনের। হাসপাতালে শয্যা নেই। একপ্রকার চিকিৎসা ছাড়া বাড়িতে গৃহবন্দি রোগী। বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা এমএএমসির দেড়’শ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। পরিকাঠামো রয়েছে। তাই ওই হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতাল করা হোক। একই সঙ্গে ঘাটতি মেটাতে বন্ধ অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু করা দরকার। সেখানে সিলিন্ডারও রয়েছে। সেটাও কাজে লাগবে। এসব দাবি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও সংশ্লিস্ট কনসোটিয়ামের কাছে জানিয়েছি।

অন্যদিকে দুর্গাপুরে সেইলের ১০ টিরও বেশী বন্ধ স্কুল রয়েছে। ওইসব বন্ধ স্কুলে সরকারি উদ্যোগে সেফ হোম করার দাবিও উঠেছে।

বিজেপি নেতা দীপ্তাংশু চৌধুরী জানান, “দুর্গাপুরে সেইলের বন্ধ স্কুলগুলিকে সেফ হোম হিসাবে কাজে লাগালে বহু মানুষ উপকৃত হবে। দুই বর্ধমান ছাড়াও আশপাশের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভুম জেলার মানুষ উপকৃত হবে। বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিষয়টি ইস্পাত মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এমএএমসির বিষয়টিও জানানো হবে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *