আমাদের ভারত,২৭ ফেব্রুয়ারি: শুধু বাড়ি, দোকানপাট, গাড়ি-বাইকই নয়, শিশুদের স্কুলও রক্ষা পায়নি দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির অরুন সিনিয়ার সেকেন্ডারি স্কুলের চৌহদ্দি এখন শ্মশান।
চারিদিকে ভাঙ্গা কাঁচ, বেঞ্চ, ছেঁড়া খাতার পাতা। কোথাও পুড়ে ছাই সব কিছু। তবে মাত্র আধ ঘন্টার জন্য সেইদিন ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকারা প্রানে বেঁচে গিয়েছিলেন। কারণ স্কুল ছুটির পর এসে তান্ডব চালায় দাঙ্গাবাজরা।
সারাদিনের পড়াশোনা, হাসি খেলায় ভোরে ওঠা অরুন সিনিয়ার সেকেন্ডারি স্কুলে অন্যদিনের মত মঙ্গলবার সকাল থেকেও ছিল কোলাহলে মত্ত। সেদিন স্কুলে ছিল পরীক্ষা। তাই পরীক্ষার শেষে খাতা গুছিয়ে রেখে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনটে নাগাদ। স্বপ্নেও কেউ ভাবতে পারেননি কিছুক্ষণ পরে কি হতে পারে তাদের স্কুলের।
তারপর মঙ্গলবার চারটে নাগাদ উন্মত্ত জনতা তান্ডব চালায় স্কুলটিতে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ক্লাসরুমে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় স্কুলে দাঁড়িয়ে থাকা বাস। কোনোক্রমে সেদিন প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়েছিলেন স্কুলের নিরাপত্তারক্ষী। আতঙ্কের সেই মুহূর্ত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। আজও ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠছেন ভয়ে। চোখের সামনে ভাসছে উন্মত্ত জনতার সেই ছবি।
রবিবার রাত থেকেই রণক্ষেত্র চেহারা নিয়েছে রাজধানী। কোন দিকে স্লোগান দেশকে গাদ্দারকো, গোলি মারো সালোকো। আবার অন্যদিকে চিৎকার আজাদি চাহিয়ে আজাদি, ছিনকে লেঙ্গে আজাদি।” জাফরাবাদ ও মৌজপুর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ছড়িয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির একের পর এক এলাকায়। লাগাতার চারদিনের হিংসায় বিপর্যস্ত। বাড়ি থেকে দোকান, স্কুল থেকে অফিস কোনওটাই রক্ষা পায়নি তাণ্ডবকারীদের হাত থেকে। হিংসার আগুন ছড়িয়েছে শিক্ষাঙ্গনে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে স্কুলে থাকা পরীক্ষার খাতা, বেঞ্চ, কম্পিউটার। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলকার। কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্কুলের সুখস্মৃতি। স্কুলে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেঞ্চ, চেয়ার টেবিল। ভাঙ্গচুর চালানো হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লকারে। ইচ্ছেমতো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে পরীক্ষার খাতা। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে খাতার পাতা। কোথাও ডাই করা ফাইল-খাতা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে স্কুলের ক্যান্টিনেও।
অরুণ সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের ক্যাশিয়ার নিতু চৌধুরী স্কুলের পুড়ে যাওয়া অংশ ঘুরে দেখতে দেখতে বললেন, মঙ্গলবারের পরীক্ষা ছিল, বেলা তিনটে নাগাদ স্কুল থেকে পড়ুয়া ও শিক্ষকরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরই বেলা চারটে নাগাদ প্রায় ২০০ জন এসে স্কুলের তান্ডব চালায়। আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ, দমকল কর্মীদের ফোন করেও পাওয়া যায়নি। রাত আটটা নাগাদ দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়। বৃহস্পতিবার পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া স্কুলের ধ্বংসাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে নিতুরদেবীর দী্র্ঘশ্বাসের সঙ্গে একটাই স্বস্তির অনুভূতি প্রকাশ হল ভাষায়, “ভাগ্যিস আধঘন্টা আগে ওদের স্কুলের দিকে চোখ পড়েনি, না হলে বাচ্চাগুলোর কি হতো কে জানে?”