করোনায় গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে রাজ্যের সংশোধনাগারগুলি থেকে ৩০৭৮ বন্দিমুক্তির সিদ্ধান্ত

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৯ মার্চ: করোনায় জেল মুক্তির আন্দোলনে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। কয়েকজন বন্দির মৃত্যু হয়, অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটে। কারা দফতরের কর্তারা মনে করছেন, অনেক জেলবন্দি কেই প্যারোলে কিছুদিনের জন্য মুক্তি দিতে হয় আবার অনেকের আত্মীয় বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে ফের সংশোধনাগারে ফিরলে অথবা বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে আসলে করোনার মত ভয়াবহ রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। সেই কারণেই সমস্ত বন্দিদের ছেড়ে না দেওয়া হলেও প্রশাসনিক স্তরে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলে বন্দিদের চাপ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে মোট ৩০৭৮ জনকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত রাজ্যের বিশেষ কমিটি। গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে কারা দফতর সূত্রের খবর।

সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিভিন্ন কম গুরুত্বপূর্ণ অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ১০১৮ বন্দিকে তিন মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন অপরাধের খাতায় নাম লেখানো ২০৬০ বিচারাধীন বন্দিকেও তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তী জামিনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারা দফতর সূত্রের খবর, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ৮৯ জন বিচারাধীন বন্দিকে ছাড়া হবে। এছাড়া প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ১৬৮, হাওড়া সংশোধনাগারে ৭৯, জলপাইগুড়ি ১৪৮, বর্ধমান ৫৯, মালদা ১৪০ এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের ১৪ বিচারাধীন বন্দিকে করোনার জেরে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, রাজ্যের সংশোধনাগার গুলিতে এই মুহূর্তে সাড়ে ২৬ হাজার বন্দি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্ট তাই দেশের সংশোধনাগারগুলির ভিড় কমাতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য গুলোকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়। শীর্ষ আদালতের এমন পর্যবেক্ষণের পর ১৯ মার্চ রাজ্যের এ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেন। সেই মোতাবেক হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বিশেষ কমিটি করে দেন। এই বিশেষ কমিটিতে রয়েছেন রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি চেয়ারম্যান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, রাজ্যের কারা বিভাগের অধিকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান সচিব। ২৭ মার্চ বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় বিশেষ কমিটি। করোনা সংক্রমণ আটকাতে সংশোধনাগার গুলির ভিড় কমাতেই এই সিদ্ধান্ত। ৬ এপ্রিল ফের বৈঠকে বসবে বিশেষ কমিটি। তাতে রাজ্যের সংশোধনাগার গুলির ভিড়ের চাপ কমানোর জন্য আরও এক দফা সিদ্ধান্ত হতে পারে। তখন ফের আরও কিছু বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *