মৃত্যুতে ঢাকা পড়ল ‘দাদার কীর্তি’, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ১৮ ফেব্রুয়ারি: অভিনয় থেকে রাজনীতির জগতে পা রেখেছিলেন তাপস পাল। সাংসদ হয়ে রাজনীতির জগতে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য। তবে, অভিনয় জগতে থাকাকালীন তাঁর ভূমিকা নায়কোচিত হলেও, বিভিন্ন কু-মন্তব্যের জন্য বাংলার রাজনীতিতে তাপস পাল হয়ে উঠেছিলেন কার্যত খলনায়ক। কৃষ্ণনগরের এই সাংসদের, ‘আমি চন্দননগরের মাল…ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’-র মতো হুমকি রাজ্যের ঘরে ঘরে তাপস পাল তথা গোটা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে বিতৃষ্ণা তৈরি করেছিল। ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার বোকাসোকা চরিত্রের ছেলেটির সঙ্গে অভিনেতা তাপস পালকে ওই সব মন্তব্যের জন্য কিছুতেই আর মেলাতে পারছিলেন না বাংলার মানুষ। এই সময় আস্তরণ থেকে উঠে আসতে শুরু করে তাঁর অন্যান্য কুকীর্তির কথাও। জানা যায়, নিজের মাকে তিনি কীভাবে কুসন্তানের মতো বাস্তুচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। নানা ভালোমানুষের চরিত্রে অভিনয় করলেও তাঁর শিল্পীজীবনে জড়িয়ে পড়েছিলেন একের পর এক নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে। শুধু কী তা-ই! সেই সময় শোনা যায়, কৈশোরের প্রেমিকাকে বিয়ে করেও দিনের পর দিন কীভাবে বধূ নির্যাতনের খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সিনেমার এই নায়ক।

অভিযোগ ওঠে, তাপসের এই সব কুকীর্তি জেনেও তাঁকে সাংসদ পদে প্রার্থী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যেই রোজভ্যালির ঘটনায় সিবিআইয়ের হাতে তাপস পাল ধরা পড়েন। বেগতিক বুঝে কার্যত এই সময় তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, আর সেভাবে যোগাযোগও রাখেননি। সূত্রের খবর, স্ত্রী এবং মেয়ের অক্লান্ত আইনি চেষ্টায় অবশেষে জামিন পান এই প্রাক্তন সাংসদ। জেলে থাকাকালীন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে নানা অনুষ্ঠানে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছিলেন। এই সময় অভিযোগ ওঠে, সুযোগসন্ধানী তৃণমূল সুপ্রিমো সকলের সামনেই বারবার তাপস পালকে এড়িয়ে গিয়েছেন। এমনকী, গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থীও করেননি।

তবে, তাপস পালের মৃত্যুতে যে তিনি অনেকের মতোই শোকমগ্ন মঙ্গলবার সেকথা বোঝাতে চেষ্টার কসুর করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নবান্ন থেকে শোকবার্তায় এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ ভোরে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র – দাদার কীর্তি, সাহেব, ভালোবাসা ভালোবাসা, অনুরাগের ছোঁয়া, অমর বন্ধন ইত্যাদি। তিনি হিন্দি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। তাপস পাল ২০১৪ সালে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের সাংসদ নির্বাচিত হন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১২ সালে তাঁকে বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়া তিনি ফিল্ম ফেয়ার ও কলাকার পুরস্কার পান। তাঁর প্রয়াণে অভিনয় এবং রাজনৈতিক জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।আমি প্রয়াত তাপস পালের আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *