রাজেন রায়, কলকাতা, ৬ মে: গতকালই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ঘোষণা করেছিল, সংক্রমণ গতিতে চতুর্থ স্থানে পৌঁছে গিয়েছে কলকাতা এবং মৃত্যুর হারও দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার ৪২ দিনের লকডাউনে আরও একটি রেকর্ড পশ্চিমবঙ্গের ঝুলিতে। প্রথম বার নতুন করোনা আক্রান্ত সংখ্যার নিরিখে একদিনেই ১০০ পার করল পশ্চিমবঙ্গ।
বুধবার নবান্নে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১১২ জন নতুন সংক্রামিত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫৬। গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হওয়ায় করোনা মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে হল ৭২। যদিও করোনা আক্রান্ত ১৪৪ জনের এখনও মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে বাকি ৭২ জনের কো-মরবিড বা মৃত্যুকালীন অন্যান্য উপসর্গ ছিল। গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ১ জন সুস্থ হওয়ায় সুস্থদের সংখ্যা ২৬৫ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ১০৪৭ জন।
তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের মোট ১৫টি ল্যাবরেটরিতে করোনা টেস্ট হচ্ছে। কোনও কোনও জায়গায় করোনা পরীক্ষার নামে সরকারি অনুমোদনহীন ল্যাবে ভুয়ো টেস্ট করে প্রতারণা করা হচ্ছে। এরকম একটি ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ পেয়েই ব্যবস্থা নিয়েছে। তাঁর পরামর্শ, ‘আইসিএমআর অনুমোদিত ল্যাবরেটরি ছাড়া আর কোনও ল্যাবরেটরিতে ব্যক্তিগত ভাবে করোনা পরীক্ষা করাতে যাবেন না।
এই মুহূর্তে রাজ্যে ৬৭টি করোনা হাসপাতাল আছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকেও করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালু করার কথা রয়েছে। ফলে রাজ্যে করোনা হাসপাতাল দাঁড়াবে ৬৮ টি। এখনও পর্যন্ত ৬৭ করোনা হাসপাতালে ৮০৩৬টি বেড আছে এবং ২৭১টি ভেন্টিলেটর আছে। এছাড়াও রাজ্যের করোনা হাসপাতালগুলিতে ৮৬০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৩.০৩% বেড ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ৩০টি ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েছে। টেস্টের সংখ্যা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ৩০১৪১টি নমুনা এখনও পর্যন্ত করোনা টেস্ট হয়েছে রাজ্যে। এর মধ্যে মঙ্গলবারই ২৫৭০ টি টেস্ট করা হয়েছে। আগে যেখানে দিনে মাত্র ২৫০ টি টেস্ট করা হত, এখন তা অনেকটাই বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজ্যে মানুষের ফিরে আসা অথবা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে এগিয়ে বাংলাতেও যেখানে মানুষ নিজের রাজ্যে ফিরতে অথবা পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে আবেদন করতে পারবেন।
এই মুহূর্তে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাসিক হাজার টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে আড়াই লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক উপকৃত হবেন।
এর মধ্যেই রাজ্যের ৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের আশা কর্মীরা। রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি অনুযায়ী প্রত্যেকদিন কনটেনমেন্ট জোনের পরিধি পরিবর্তিত হচ্ছে। রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে গেলেই তা জানতে পারবেন সাধারণ মানুষ। করোনার জেরে মৃত্যু নির্দিষ্ট প্রোটোকল অনুসরণ করে ডাক্তাররাই ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে পারবেন বলেও এদিন জানান তিনি।