আমাদের ভারত, নদিয়া, ১১ সেপ্টেম্বর: বিজেপির টিকিটে জয়লাভের পর বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছিল দম্পতিকে। স্থানীয় তৃণমূল এবং প্রশাসনিক চাপের কাছে মাথা নত না করার কারণে এবার চাকরি গেল সিভিক ভলান্টিয়ার স্বামীর। এমনই দাবি শান্তিপুরের এক সিভিক ভলান্টিয়ার ও তার তার পরিবারের।
চরম অমানবিক ঘটনাটি নদিয়ার শান্তিপুরের নৃসিংহপুর অঞ্চলে। সেখানে সুপর্ণা বর্মন আগের ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যা। গত দু’বছর আগে, পাশের পাড়ার সিভিক ভলান্টিয়ার কার্তিক হালদারের সাথে বিয়ে হয় ওই পঞ্চায়েত সদস্যার। এবারে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুপর্ণা বর্মন জয়লাভ করেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। বেশকিছু জায়গায় ভোটে হেরে বাড়ি ছাড়ার নিদর্শন থাকলেও সুপর্ণাদেবী জয়লাভের পর, স্বামীকে নিয়ে উধাও হয়ে যান তৃণমূলে যোগদান না করার জন্য। তার কথা অনুযায়ী, শান্তিপুর থানার পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল এবং বহিরাগত তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তার বাপের বাড়ি এবং শ্বশুর বাড়িতে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেছেন তৃণমূলে যোগদান করার জন্য। এরপর বোর্ড গঠনে অংশ নেওয়ার পর তিনি ভেবেছিলেন, এবার বুঝি কিছুটা স্বস্তি মিলবে। কিন্তু গতকাল রাতে থানা থেকে তার স্বামীর সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি থেকে অব্যাহতি পত্র পেয়ে ঘুম উড়েছে পরিবারের সদস্যদের।
সরাসরি পেটের ভাত কেড়ে নেওয়ায় মুখ খুলেছেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার কার্তিক হালদারও। তিনি বলেন, এখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ডিউটিতে অনিয়মিত যোগদানের। কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে চাকরির কোনো ছুটি পর্যন্ত দেননি তিনি, তবে একদিকে পুলিশের চাপ অন্যদিকে তৃণমূলের। জয়লাভের পর থেকে এই একমাস প্রাণভয়ে ডিউটিতে যাওয়া হয়নি, এ বিষয়ে পুনরায় আবেদন করা সত্ত্বেও সদুত্তর মেলেনি শান্তিপুর থানা থেকে। পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর, কয়েক বছরের মধ্যে দাদার মৃত্যু। বৃদ্ধা মা, মৃত দাদার পরিবার সবই তার উপরে নির্ভরশীল। এখন পরিবারের মুখে কিভাবে খাবার জোগাড় করবেন সেই চিন্তায় উদ্ভ্রান্ত তিনি।
বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সুপর্ণা দেবী বলেন, সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমার ভোট প্রচারে একদিনও স্বামীকে পাইনি। সম্প্রতি তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এক পুলিশের নাম উঠেছিলো শান্তিপুরেই, সেক্ষেত্রে কোনো অন্যায় ছিলো না। সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে শান্তিপুর থানার ওসি, তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন, তাতেও কোনো অপরাধ হয়নি। শুধুমাত্র আমার জয়ের কারণে তৃণমূলের সাথে পুলিশ প্রশাসনেরও গাত্রদাহ হয়েছিল। অন্যত্র পালিয়ে না গেলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলতে পারত।
বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ রাজ্যে এ ঘটনা খুব স্বাভাবিক। পুলিশ প্রশাসন যে দল দাসের কাজ করে এ ধরনের নিত্য ঘটে যাওয়া ঘটনাই তার জলন্ত প্রমাণ। আসলে নদিয়া জেলার মধ্যে শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতিই একমাত্র বিজেপির দখলে। এসেছে তিনটে পঞ্চায়েতও। আর সেগুলি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই, জয়ের পরে প্রত্যেকের উপর পুলিশি অত্যাচার নেমে এসেছিলো। শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৯টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে পেয়েছে বিজেপি, ১৩টি তৃণমূলের। স্বভাবতই বোর্ড ঘোরানোর খেলায়, তৃণমূলের সাথে মত্ত হয়েছিলো পুলিশ প্রশাসনও। শুধুমাত্র বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী বলে তারা, নিজেদের আত্মগোপন করে রেখেও, বোর্ড গঠনে অংশগ্রহণ করেছিলো। তবে সিভিক ভলেন্টিয়ারের এই অন্যায় বিয়ে নিয়মী অপসারণ বিষয়ে, তারা আইনের দ্বারস্থ হবেন বলেই জানিয়েছেন।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য, কটাক্ষ করে বলা হয় তারা নিজেদের যখন আত্মগোপন করেই রেখেছিল তাহলে আর চাপ দেওয়া কিভাবে সম্ভব? সিভিক ভলান্টিয়ারের অপসারণ প্রশাসনিক বিষয়, এর সাথে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, শেষ এক মাস অনুপস্থিত থাকার কারণেই তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নয় এর আগেও কাজের মূল্যায়নে এবং অনুপস্থিতির কারণে অনেকে বাদ গেছে, সেটা ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব বিষয়।
যদিও ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের মা দাবি করেছেন, তার ছেলের এবং পরিবারের আগামীতে কোনো ক্ষতি হলে তার জন্য দায়ী থাকবে পুলিশ প্রশাসন।