Jhargram, Mamtar Bandhan, “মমতার বন্ধন” চায় চুবকা ও মণিদহ

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুলাই: কংসাবতীতে সেতু চায় জঙ্গলমহলের দুই গ্রাম।

কংসাবতীর একপাড়ে ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম ব্লকের চুবকা গ্রাম পঞ্চায়েতের চুবকা গ্রাম, আর নদীর অপর পাড়ে মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের মণিদহ গ্রাম। দুই গ্রামের বাসিন্দারা চাইছেন স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ করা হোক। পাশাপাশি ফেরিঘাটের রাস্তাও তৈরি করে দেওয়া হোক। বাজার, হাসপাতাল যেতে গেলে চুবকা গ্রামের বাসিন্দাদের নদীতে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্থায়ী কোনও ফেরিঘাট নেই। তাই অস্থায়ী ফেরিঘাট দিয়েই যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। বর্ষায় ফেরিঘাটের রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। জলকাদা পেরিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে রীতিমতো দুর্ভোগ পোহাতে হয় দুই গ্রামের বাসিন্দাদের।

এই সাঁকোর দুই প্রান্ত শুধু দুটো গ্রামের মিলন ঘটায়নি, ঘটিয়েছে দুটো গ্রাম পঞ্চায়েতের, দুটো ব্লকের, দুটো বিধানসভার, দুটো লোকসভার, দুটো থানার, দুটো মহকুমার, এমনকি দুটো জেলারও মিলন। দুই গ্রাম যেন প্রশাসনিকভাবে দুই আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত।

প্রতিদিন চুবকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে কর্মসূত্রে নদী পার হয়ে আসতে হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার, স্কুল, কলেজ থেকে প্রশাসনিক যে কোনও কাজেই চুবকা গ্রামের বাসিন্দারা মেদিনীপুরে ছুটে আসেন। অপরদিকে সমস্ত প্রশাসনিক কাজে ছুটে যান ঝাড়গ্রাম। তবে স্থায়ী ফেরিঘাট না থাকায় মাটির রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। বর্ষা এলে দুর্গম হয়ে ওঠে ফেরিঘাট। সাইকেল ভ্যান নিয়েও যাওয়া যায় না। দুই গ্রামের বাসিন্দারা কৃষিকাজের উপরেই নির্ভরশীল। তাই অনেকেই সবজি নিয়ে প্রতিদিন নদী পেরিয়ে যাতায়াত করেন। সবজি ভর্তি সাইকেল, ভ্যান নিয়ে ঐ রাস্তায় যাতায়াত করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় বাসিন্দাদের। তাঁরা চাইছেন স্থায়ী পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হোক। নাম হোক মমতার বন্ধন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা শ্যামসুন্দর মন্ডল বলেন, বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধা, ছাত্র-ছাত্রী থেকে প্রসূতি বর্ষাকালে জল বাড়লে নদী পেরিয়ে যাতায়াত করতে খুব অসুবিধা হয় সকলের। বর্ষা এলে নদীর জল স্তর বাড়তে থাকে, বর্ষায় নদীর অবস্থা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তখন বন্ধ হয়ে যায় বাঁশের সাঁকো, ভরসা জোগায় নৌকো। এছাড়াও নদী বাঁধ ভাঙ্গনের কারণেও ঘাট দীর্ঘদিন এক জায়গায় স্থায়ী থাকে না।

আরেক বাসিন্দা মঞ্জু মন্ডল বলেন, ফেরিঘাট পর্যন্ত আসার রাস্তা একেবারে ভয়াবহ। টোটো, ভ্যান তো দূরের কথা, সাইকেল, মোটর সাইকেল নিয়েও ভয়ে ভয়ে ঘাটে আসতে হয় আমাদের। চুবকার আরেক বাসিন্দা নিমাই ঘোষ বলেন, রাতে কারও কিছু সমস্যা হলেও আমাদের ওই রাস্তার উপরেই নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া শহরে যাবার বিকল্প রাস্তায় ১৮ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়। তাই সকলে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া নদীর ধারে ঝোপঝাড় দিয়ে ঢাকা থাকে। আলো নেই। আমরা চাই দ্রুত মমতার বন্ধন সেতুটি নির্মাণ শুরু হোক।

অপরদিকে বিজেপির তরফে বক্তব্য লক্ষ্মীর ভান্ডার বিলি করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী। শাসক দলের পক্ষে সেতু নির্মাণ অসম্ভব। কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত অর্থ পরিকল্পনা কোনটাই রাজ্যে ফলপ্রসূ করতে দিচ্ছে না বর্তমান রাজ্যের শাসক দল। তাই এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা স্বপ্নমাত্র। রাজ্যে পরিবর্তন হলে এই সেতু নির্মাণ হবে।

শাসক দলের তরফে জানানো হয়েছে, ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুর দুই লোকসভাতেই ২০১৯ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বিজেপির সাংসদ ছিল। তারা কোনরকম এই ধরনের পরিকল্পনানামা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়নি। বিজেপি চাইলেই সেটা হতে পারতো। এই সেতু নির্মাণ করতে পারে একমাত্র শাসক দল। এই সেতু নির্মাণের পক্ষে সওয়াল বাম ও কংগ্রেসেরও। তাদের পক্ষে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক কুট-কাচালিতে না গিয়ে আমরা চাই দ্রুত সেতু নির্মাণ হোক। সেতু চায় দুই গ্রামের মানুষও।

নির্বাচনের আবহে প্রতিশ্রুতি ও পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল সব দলই। মিটেছে লোকসভা নির্বাচন। দুই বছর বাদে বিধানসভা নির্বাচন। জঙ্গলমহলের এরকম এক প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের মমতার বন্ধন সেতুর দাবি কতটা ফলপ্রসূ হয় আগামী দিনে সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *