স্বদেশীদের বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা চঞ্চলের, বাংলাদেশে জোরালো হচ্ছে তাঁকে বয়কটের ডাক

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২৭ নভেম্বর:বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ভারতের পরাজয়ে বাংলাদেশে যে উৎসব চোখে পড়েছে, তাতে চরম ক্ষুব্ধ এপার বাংলার একটা বড় অংশ। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা স্বদেশীদের এই ভারত-বিরোধী মনোভাবের সমালোচনা করেছেন। ফলে ওদেশে ক্রমেই বাড়ছে তাঁকে বয়কটের ডাক। কেউ কেউ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর চর বলেও অভিযোগ তুলছেন।

চঞ্চলের মন্তব্য, “খেলাকে আর মানুষ শুধু মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছে না। এটাই আমার খারাপ লাগার জায়গা। খেলাতে হার-জিত থাকেই, তবে সেটার ফলে এমন হিংসার ছবি প্রকাশ্যে আসা কাম্য নয়। বাংলাদেশে অনেক ভারত বিদ্বেষী আছে, এটা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই। সে রাজনীতি হোক কিংবা খেলা, সবক্ষেত্রেই। এটা বাস্তব। সব দেশেই এমন থাকে। বাংলাদেশেও আছে।”

বস্তুত চঞ্চল কিন্তু সেভাবে বাংলাদেশিদের তোপ দাগেননি। বাস্তব পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। কিন্তু এ সম্পর্কে সম্প্রতি সঞ্জীব খান ও মহম্মদ রুমন নামে দুই নেটনাগরিক ধারালো ভাষায় আক্রমণ করেছেন চঞ্চলকে। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটেয় এই দু’জনের পোস্টে লাইক পড়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৯০০ ও ২ হাজার ২০০। মন্তব্য পড়েছে হাজারখানেক করে। এর সিংহভাগে বাংলাদেশিরা তুলোধোনা করেছেন চঞ্চলকে, সেই সঙ্গে ভারতকে।

বড় মাপের সংগৃহীত যে পোস্ট সঞ্জীব খান শেয়ার করেছেন, তার প্রথম পরিচ্ছেদে লেখা, “চঞ্চল চৌধুরীরা ভুলে যান বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষরা স্বাধীন। খেলায় প্রতিবেশী দেশকে সমর্থন করতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ইন্ডিয়ানরা কি বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করে? নাহ। আমি তো দেখেছি বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় বাঙালির ইডেন গার্ডেনে ভারতীয়রা পাকিস্তানকে সমর্থন দিচ্ছে। যে যেই দলকে সমর্থন করে, সেই দল জিতলে উল্লাস করবেই।”

সঞ্জীবের পোস্ট-এর শেষ পরিচ্ছেদে লেখা, ”চঞ্চল চৌধুরী, আপনি ভারতীয় মিডিয়ায় বলছেন ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করা বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া জিন বহন করে, মানে দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের রক্তই দূষিত। চঞ্চল চৌধুরী, আপনি রাতের ভোটের বা কলাকুশলীদের পক্ষের লোক হিসাবে নিজেকে আগেই প্রমাণ করেছেন, এবার প্রমাণ করলেন আপনি বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠী আরএসএস-এরও লোক। আপনি ওদের ভাষাতেই কথা বলেছেন। যেন আপনি বাংলাদেশের না, ভারতের নাগরিক এবং আরএসএস-এর প্রতিনিধি। জনবিরোধী এই অভিনেতাকে বয়কট করার সময় এসেছে।”

চঞ্চলকে উদ্দেশ্য করে মহম্মদ রুমন লিখেছেন, “আপনি হয়তো বুঝতে পারেন না, বা বুঝতে চান না যে কোনটা প্রেম আর কোনটা বিদ্বেষ। ভারত বিদ্বেষী হতে গেলেই যে পাকিস্তান প্রেমী হতে হবে সে থিওরি আপনি কোথায় পেয়েছেন? আমি মনে করি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিই এখন ভারত বিদ্বেষী। যার ভিতরে নূন্যতম দেশপ্রেম আছে সে কখোনোই ভারতপ্রেমী হতে পারে না।
বরং বাংলাদেশি হয়ে যাদের মধ্যে ভারতপ্রীতি বেশি, বিশেষ করে চঞ্চল চৌধুরীর মতো লোকেরা, তারা ঠিক ঐ প্রজাতীর মধ্যেই পড়ে, যেই প্রজাতীর মধ্যে ৭১ সালে পাকিস্তান প্রীতি ছিলো। এখন কথা হইলো, ৭১ সালে পাকিস্তান প্রীতি যাদের ছিলো, তাদের যদি আমরা রাজাকার বলতে পারি তাহলে বর্তমানে যাদের অন্তরে দেশপ্রেম এর চেয়ে ভারত প্রীতি বেশি, তাদেরকে কি আমরা দালাল বলতে পারি না? আমি মনে করি চঞ্চল চৌধুরী এই বিষয়টিকে পুঁজি করে দেশে একটি সাম্প্রদায়িক আচরণ করেছেন এবং দেশ ও জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *