সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ জুন: দলীয় কর্মসূচিতে পরপর অনুপস্থিত থাকলে এবার জনপ্রতিনিধিদের সাম্মানিক বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়। এই হুঁশিয়ারি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে বাঁকুড়ার রাজনৈতিক মহলে। আগামী বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬- কে লক্ষ্য রেখে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জর্জরিত শাসক দল তৃণমূলের ঘর গোছাতে জেলা নেতৃত্ব হুঁশিয়ারিকে টোটকা হিসাবে ব্যবহার করছে বলে জেলা রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।
আবার একাংশের ধারণা বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই হুঁশিয়ারি। যদিও সভাধিপতির এই বক্তব্য অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলে কটাক্ষ করেছে জেলার রাজনৈতিক দলগুলি। উল্লেখ্য, বাঁকুড়ার শালতোড়ায় দলের এক কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, দলের কাজ না করলে জনপ্রতিনিধিদের সাম্মানিক বন্ধ করা হবে।তিনি বলেন যে, “পঞ্চায়েতের পরপর তিনটি বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা গরহাজির থাকলে যেমন পঞ্চায়েত সদস্যদের সাম্মানিক বন্ধ হয়ে যায়, তেমন এবার থেকে দলের বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা গরহাজির থাকলে তাঁদের সাম্মানিক বন্ধ করে দেওয়া হবে”। এ প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পঞ্চায়েতের তিন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট হারে সরকারি সাম্মানিক পান। দলীয় কর্মসূচিতে গরহাজির থাকলে সেই সাম্মানিক বন্ধ করার কোনও এক্তিয়ার তৃণমূলের নেই।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সৌগত পাত্র বলেন, তৃণমূল দলীয় কাজ ও সরকারি কাজকে এক করে ফেলেছে। শাসক দলের নেতারা বুঝতে পারছেন যে দলেরই জনপ্রতিনিধিদের একাংশ দলীয় কাজে খুশি নয়। তাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে তারা। আগামী ২০২৬ নির্বাচনের আগে তাদের সংগঠনমুখী করতেই এখন তৃণমূল নেতৃত্বকে এমন হুঁশিয়ারি দিতে হচ্ছে।
বিজেপির বক্তব্য, থ্রেড কালচার তৃণমূলের। এখন দলীয় নেতা, কর্মী এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও বাদ যাচ্ছেন না। সম্প্রতি বাঁকুড়ার তালডাংরায় দলীয় কার্যালয়ে এক কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তারাশঙ্কর রায় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যে বদমায়েশি করবে তার ওষুধ আমার কাছে আছে।” সেই ওষুধও দেওয়া হবে। এই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, তারাশঙ্করবাবুর স্ত্রী হলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের জয়পুর ব্লক সভাপতি কৌশিক বটব্যালকেও একই ভাবে কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায়। জয়পুরে এক কর্মিসভায় তাকে বলতে শোনা যায় যে, “চায়ের দোকানে বসে দল বিরোধী আলোচনা বন্ধ করতে হবে। দলে থেকে কেউ বিরোধিতা করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চায়ের দোকানের রাজনীতি মানা হবে না।”
সম্প্রতি বাঁকুড়ার রাইপুরে এক দলীয় রাজনৈতিক কর্মশালায় বাঁকুড়ার সাংসদ অরুপ চক্রবর্তী বক্তব্য রাখতে উঠে কতজন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এসেছেন তা জানতে চান। অনেক প্রধান উপস্থিত না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাংসদ। মঞ্চ থেকেই প্রকাশ্যে বলেন, “প্রধান থাকব অথচ দলের কাজ করব না বা সভায় যাব না, এমন প্রধান তাদের দরকার নেই। তারা পদত্যাগ করুন। নতুন পঞ্চায়েত প্রধান তারা তৈরি করে দেবেন। পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা ওই কর্মশালায় এসেছেন কী না খোঁজ নিয়ে সাংসদ স্থানীয় ব্লক সভাপতিকে নির্দেশ দেন, যারা এদিনের দলীয় সভায় আসেননি তাদের কাছ থেকে কৈফিয়ৎ তলব করে নেবেন।
সাংসদ অরুপ চক্রবর্তী আরও বলেন, “দলের টিকিটে জিতে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হবে আর দলের ভোটার লিস্ট যাচাই- এর কাজ না করেই পঞ্চায়েতে বসে থাকবে তা চলবে না।