আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ১৯ সেপ্টেম্বর:অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার অবসানের দাবিতে আগামী শনিবার ঢাকা-সহ সারা বাংলাদেশে বিকেল ৪টেয় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা করা হয়।
ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, “শেখ হাসিনা পতন-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনাবলীর নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, ১৯৯০-র অক্টোবর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সকল মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার ঘটনাবলীর তদন্তের দাবিও তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব Antonio Guterres-র কাছে এই আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই তদন্তের মধ্যে দিয়ে ঠিক করা হোক সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত হিংসার ঘটনাবলী রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক না সাম্প্রদায়িক। এসব ঘটনার জন্যে দায়ী ব্যক্তিদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উপর সংবাদ সম্মেলনে জোর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সাম্প্রদায়িক হিংসার তথ্যানুসন্ধানে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৯ সালে শাহাবউদ্দিন কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিটি ২০১১ সালে পূর্বতন সরকারের কাছে সুপারিশসম্বলিত রিপোর্ট পেশ করলেও তার সুপারিশ বাস্তবায়ন দূরের কথা আদৌ আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৩ সালের পর থেকে ২০২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত যেসব সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে তারও কোনও বিচার হয় নি। ২০২১ সালের দুর্গাপুজোর সময়কালের সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরুর পরপরই তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেলের সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজের কাছে আবেদন দায়েরের সাথে সাথে তা স্থগিত হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলা হয়, বিগত চার দশক ধরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে যে সব সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলী ঘটেছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় রুজুকৃত দুটি হত্যা মামলায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মানবাধিকার নেতা এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়েরে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ‘ম্যাজিস্ট্রেসী’ ক্ষমতা দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের চলতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সমাজের এক শ্রেণির সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে, বাড়িঘরে আজও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্গাপূজোর প্রতিমা ভাংচুর করা হচ্ছে। চাঁদাবাজিও অব্যাহতভাবে চলছে। সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
এক শ্রেণির মানুষের মনোজাগতিক উপলব্ধিতে থাকা ভারত বিরোধীতা হিন্দুবিরোধীতায় পর্যবসিত হয়েছে। এরূপ মানসিকতাদোষে দুষ্ট এক শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্বৃত্ত মহলবিশেষের প্ররোচনায় ও ইন্ধনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও পদত্যাগের হুমকি দিয়ে চলেছে। এসব ঘটনার সাথে যুক্ত দুর্বৃত্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
মি: নির্মল রোজারিও মানবাধিকার নেতা রাণা দাশগুপ্তসহ সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।”