অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, কলকাতা, ৪ ফেব্রুয়ারি: প্রায় চার দশক ধরে স্যাক্সোফোন বাজাচ্ছেন অনুপ চ্যাটার্জি। বিভিন্ন ভাষায় তাঁর পরিবেশিত অগনিত জনপ্রিয় গান অনেকে শোনার সুযোগ পেয়েছেন। রবিবার তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মিতার স্যাক্সোফোনের মূর্চ্ছনার স্বাদ পেলেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের উপস্থিত সদস্য ও তাঁদের কয়েকজনের পরিবারবর্গ।
উপলক্ষ ক্লাবের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। কাবাডি অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় সমাবেশ। শুরুতে নাম নথিভূক্তিকরণের পর ক্লাবের টুপি পড়া, চা পান ও প্রাতঃরাশের বাক্সের সদ্ব্যবহার। পতাকা উত্তোলন ও সভাপতি স্নেহাশিস সুরের সংক্ষিপ্ত ভাষণ। স্নেহাশিস বললেন, এটা সেই অর্থে প্রতিযোগিতা নয়। প্রতিযোগিতার নামে ক্লাবের ঘরোয়া সমাবেশ। বছরে ক’টা নির্দিষ্ট দিনে ক্লাব সদস্যরা সপরিবারে সবাই এক হয়ে যান।
প্রতিযোগিতায় ছিল মোট ৯টা বিভাগ। প্রথমে এ— ২-৭ বছরদের জন্য দৌড় এবং কমলালেবু দৌড়। দুটোই ২৫ মিটার দূরত্বের। বি-তে (৮-১৩ বছরদের জন্য) ৫০ মিটার দৌড় এবং ‘সাম রেস’। সি-তে (১৪-১৭ বছরদের জন্য) ৫০ মিটার দৌড়। ডি-তে (১৮-৫০ বছরদের জন্য) ৫০ মিটার দৌড়। ই-তে (৫১-৬০ বছরদের জন্য) ৫০ মিটার হাঁটা। এফ-তে (৬০ বছরের উর্দ্ধদের জন্য) ৫০ মিটার দৌড় এবং হিটিং দ্য উইকেট। জি-তে (মহিলাদের জন্য) ‘ব্রেকিং দি পিচ’ ও বল ছোঁড়া। এইচ (ক্লাবের কর্মীদের)-তে হিটিং দি উইকেট। সবশেষে যেমন খুশি সাজো।
এই সব খেলার ফাঁকে ফাঁকে স্যাক্সোফোনে বেজেছে নানা চিরকালীন গান। জীবনাবসানের পর শ্মশাণে গেলেও বোধ হয় আক্ষরিক অর্থে আপাদমস্তক কোনও সাংবাদিক খাট থেকে উঠে খোঁজ করবেন, কার সাক্ষাৎকার নেওয়া যায়। আমিও সেভাবে ধরলাম অনুপ চ্যাটার্জিকে।
প্রযুক্তি ও যুগান্তরের সাথে সাথে কিছু বাদ্যযন্ত্র আমূল বদলে গেলেও স্যাক্সোফোন রয়ে গিয়েছে স্বমহিমায়। ক্যালকাটা স্কুল অফ মিউজিকে স্যাক্সোফোনের শিক্ষক অনুপবাবুর কথায়, “বলতে পারেন জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ইউরোপ-জাত এই যন্ত্র ষাটের দশকেই জায়গা নেয় বলিউড-টলিউডে সেলুলয়েডের জমাটি নানা গানে। এক একটা স্যাক্সোফোনের দাম ২৫ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকার মত।” মিতারও স্যাক্সোফোনে প্রায় এক দশক হতে চলল। আগে উনি কি বোর্ড বাজাতেন, জানালেন অনুপবাবু। পশ্চিমবঙ্গে আপনাদের মত স্যাক্সোফোন-দম্পতি আর আছে? অনুপবাবুর উত্তর, “অন্তত আমার জানা নেই”।
‘ওই উজ্জ্বল দিন’, ‘তখন তোমার ২১ বছর’, ‘পাপা কহতে হ্যায়’, ‘গুলাবি আঁখে’— এই সব শুনতে শুনতে আমরা প্রবীণ সাংবাদিকরা অনেকেই মনে মনে ফিরে যাচ্ছিলাম সোনালি যুগের গানে। “If music be the food of love play on”— ‘টুয়েলফথ নাইট’-এ লিখেছিলেন উইলিয়াম সেক্সপিয়র। আজও কথাটা সমান সত্যি। এই সব গানের মূর্চ্ছণা যেন আমাদের পারস্পরিক বন্ধন যেন আরও অটুট করে দিল।
এর পর মধ্যাহ্ণভোজন, বিশ্রাম এবং পুরস্কার বিতরণ— সব মিলিয়ে শেষ হল কলকাতা প্রেস ক্লাবের সদস্যদের আকাঙ্খিত একটা দিন।