অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ১৭ নভেম্বর: বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের আধুনিক ও আরও বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণে উদ্যোগী হচ্ছে বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ বিএসএইইউ (পূর্বতন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স ট্রেনিং, এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন)। পূর্ব ভারতে স্নাতকোত্তর স্তরে এ ধরণের ‘অফলাইন’ পাঠ্যক্রমের ভাবনা এই প্রথম।
শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুর শিক্ষাগ্রহণ বাধত্যমূলক। সেই সূত্র ধরে প্রত্যেক স্কুলে বিশেষ শিক্ষক এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা রাখা উচিত— এই দাবি জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন সঞ্জীব ধর। সেই মামলাতেই আদালত রাজ্যকে চারটি বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলে। স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের শিক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য, তা গত ৮ মে জানতে চায় কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অভি়জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, এখন রাজ্যে কতজন বিশেষ শিক্ষক রয়েছেন, ১৬ মে-র মধ্যে তা রিপোর্ট দিয়ে জানাতে। এমনকি, এই শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ স্কুল ছাড়া সাধারণ স্কুলে আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা-ও রাজ্যকে জানানোর নির্দেশ দেন।
বিএসএইইউ-এর প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রম (ইনক্লুসিভ এডুকেশন)-এর ক্লাশ হবে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে প্রতিষ্ঠানের সদর দফতরেই। এ ব্যাপারে মূল উদ্যোগ এবং ভাবনা উপাচার্য ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি জানান, শিক্ষায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁরা যাতে সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে ভালভাবে মানিয়ে নিতে পারেন, সেই লক্ষ্যে স্নাতকোত্তর স্তরে এক বছরের এই পাঠ্যক্রম।
বিএসএইইউ-এর প্রস্তাবিত ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমের অধ্যাপক ডঃ বিশ্বজিৎ বালা এই প্রতিবেদককে বৃহস্পতিবার জানান, “এক বছরের পাঠ্যক্রম দুটি সেমিস্টারে বিভক্ত। বিশদ পরিকল্পনার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা চলছে। স্নাতকস্তরে ৫০ শতাংশপ্রাপ্তরা এই পাঠ্যক্রমের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আসনসংখ্যা ৪০। আগামী এপ্রিল মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। ক্লাশ শুরু হওয়ার কথা আগামী জুলাই থেকে।“
বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ক্ষমতায়ন দফতর, সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক এবং তার আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা দিব্যাঙ্গদের পুনর্বাসন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল লিম্ব ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন দিব্যাঙ্গদের সরঞ্জাম মেরামত সহ অন্যান্য সহায়তা সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। একইভাবে ন্যাশনাল হ্যান্ডিক্যাপ ফিনান্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন দিব্যাঙ্গদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালানোর জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে এবং দিব্যাঙ্গদের স্বল্প সুদে ঋণ সরবরাহেরও ব্যবস্থা করেছে।
পাশাপাশি সেকেন্দ্রাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ পার্সনস উইথ ইন্টেলেকচুয়াল ডিসঅ্যাবেলিটিস একটি টোলফ্রি হেল্পলাইন নম্বরের মাধ্যমে দিব্যাঙ্গদের বিশেষ শিক্ষা, পেশাগত ফিজিওথেরাপি সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করছে।এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স- এইমস মানসিক দিক থেকে দিব্যাঙ্গ অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের অভিভাবকদের সাহায্যের জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। রাজ্যস্তরেও রয়েছে নানা সরকারি পরিকল্পনা। কিন্তু অভিজ্ঞদের বক্তব্য, এসবের রূপায়ণ, বিশেষত বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পঠনপাঠনের ব্যাপারে আরও যত্নবান হওয়া দরকার।