৭ বছর ধরে ১৮২ জন তরুণীর নগ্ন ভিডিও করে ব্ল্যাকমেল, ধৃত কলকাতার ২ যৌন আসক্ত যুবক সহ ৩

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৩০ জানুয়ারি: এ যেন একবারে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে, প্রচুর টাকার মালিক দুই বন্ধু। আর সেই টাকার জাদু মন্ত্রেই একের পর এক তরুণীদের বশ করে তারা নিয়ে আসতো নিজেদের বিছানায়। আর শরীরী ফুর্তির কিছুদিন পরেই সেই ভিডিও ফুটেজ সংশ্লিষ্ট তরুণীকে দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে চলত টাকা আদায়। একজন দু’জন নয়, গত ৭ বছরে এদের যৌন আনন্দের শিকার হয়েছে ১৮২ জন তরুণী। কিন্তু সব কিছু পুলিশের কাছে ফাঁস করে দিল এদেরই একজন। পুলিশ গ্রেফতার করেছে আদিত্য আগরওয়াল, আনিশ লোহারকর এবং তাদের বন্ধু কৈলাস যাদবকে।

পারিবারিক বস্ত্র ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে আদিত্য আগরওয়াল, তারই বন্ধু আনিশ লোহারকর, দুজনেই পেশায় ব্যবসায়ী। একের পর এক তরুণীকে ভালোবাসার মন্ত্রে আর টাকার জাদুতে বিছানায় এনে ফেলা ছিল এদের নেশা। ক্রমাগত সফল না হলেও ব্যর্থতার নজির খুব একটা নেই। আর বড়লোকের ছেলের পয়সার লোভে মৌমাছির মতো একের পর এক তরুণী ধরা দিতেন তাদের জালে। শুধু তারা জানতেন না, যে ঘরের বিছানায় তাদের শরীরী প্রেম হত এত সব শরীরী প্রেম ভালবাসা খেলা সেই ঘরেই গোপনে রাখা থাকত স্পাই ক্যামেরা। সেখানেই উঠত সেই সব মেয়েদের নগ্ন শরীরের ছবি, ভিডিও। আর সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হবে এই ভয় দেখিয়ে শুরু হয়েছিল ব্ল্যাকমেল করার ব্যবসা। আর এভাবে চলে যাচ্ছিল বেশ ভালোই।

আসলে আদিত্য আর আনিশ একরকম জোর করেই ওই সব মেয়েদেরকে ফোন করাতো আনিশের কর্মচারী কৈলাস যাদবকে দিয়ে। সেভাবেই আদিত্যর একসময়কার এক প্রেমিকাকে তাই ফোন করেছিল কৈলাস। জানিয়েছিল তাঁর ব্যক্তিগত মুহুর্তের সব ছবি রয়েছে তার হাতে। লাখ তিনেক টাকা না দিলে সেই সব ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায়। মেয়েটি ঘাবড়ে গেলেও একদম দমে যায়নি। বরঞ্চ গোপনে যোগাযোগ করেছিল লালবাজারের পুলিশের সঙ্গে। যেটা এতদিন বাকিরা করতে সাহস পাননি।

ওই তরুণী লালবাজারকে জানান, আদিত্য ছাড়া আর কারোর সঙ্গেই তাঁর কোনও রকমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়নি। এরপরেই পুলিশ ফোনের সুত্র ধরে আটক করে কৈলাসকে। তাকে জেরা করতেই বার হয় সব তথ্য। কৈলাসের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় আদিত্য ও আনিশকে। দুইজনের কাছ থেকে মিলেছে ১৮০জন তরুণীর নগ্ন ভিডিও ও স্টিল ছবি। যা দেখিয়েই চলছিল ব্ল্যাকমেলের ব্যবসা।

পুলিশ জানিয়েছে, আদিত্য আর আনিশ কেউই মন থেকে কারোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতো না। বিছানায় শোয়ার জন্য প্রেমের অভিনয় করে যেত। বিছানার ফূর্তি হয়ে গেলেই মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিত।
কৈলাস নিজে থেকে এইসব ফোন করতে চায়নি। কিন্তু তাকে পয়সার লোভ দেখিয়ে কার্যত জোর করে ওই সব ফোন করাত আদিত্য আর আনিশ। তাদের ধারণা ছিল বিপদে পড়লে পড়বে কৈলাস, তারা বেঁচে যাবে। যদিও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিচারক তাদের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে পুলিশকে ভাবাচ্ছে অন্য বিষয়। এক, শুধুই কি টাকা নেওয়ার জন্যই ব্ল্যাকমেল? নাকি ব্ল্যাকমেল করে চলত ধর্ষণ আর গণধর্ষণ? দুই, কিভাবে এই বিপুল সংখ্যার মেয়ে এই দুই যুবকের শয্যাসঙ্গী হল? কোন যাদুমন্ত্রে এদের বশ করত আদিত্য আর আনিশ? নাকি দলে রয়েছে আরও কেউ কেউ? এই সমস্ত তথ্য পেতে তদন্ত শুরু করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *