এলাকার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বাইরের লোক রাখায় বাধা বিজেপির

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ২৯ মে: কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যাতে বাইরের কোনো লোককে না রাখা হয় সেই জন্য পাহারার ব্যবস্থা করল গ্রামবাসীরা। আর গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এগিয়ে এল বিজেপি।এই ঘটনা নাকাশিপাড়ার খিদিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের।

জানা গেছে, নাকাশিপাড়া থানা এলাকায় ১৯৭টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে। সেখানে বহু মানুষকে রাখা হয়েছে। দেশের প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে। সম্প্রতি বীরপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বীরপুর হাই স্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে একজনের করোনা ধরা পড়েছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ওই ব্যক্তিকে বাইরে থেকে এনে এখানে রাখা হয়েছিল। তারপরেই আতঙ্ক ছড়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে। কারণ বেথুয়া ডহরি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খিদিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছে। সেখানে যাতে কোনো বাইরের রোগী না রাখা হয় সে জন্য সতর্ক হয়েছে। আর এ বিষয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। গ্রামবাসী ও বিজেপি নেতৃত্ব যৌথভাবে ওখানে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। পাহারা চলছে গতকাল থেকে।

বিজেপির নদিয়া জেলার তপশিলি মোর্চার সভাপতি অনুপ কুমার মন্ডল জানান, গতকাল বাইরে থেকে কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে খিদিরপুর প্রাইমারি হাইস্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আনা হয়েছিল। যেহেতু পাড়ার কেউ এখানে বাইরে থাকে না সবাই নদিয়াতেই কাজকর্ম করে সে কারণেই আমরা সম্মিলিতভাবে সবাই বাধা দিয়েছিলাম। আপাতত বাইরের লোক রাখা এখানে বন্ধ আছে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ছি না। আর নাকাশিপাড়ায় এই মুহূর্তে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে বীরপুর হাই স্কুলে যে আরও একটা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার আছে সেখানে একজন বাইরে থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা ধরা পড়েছে। এই নিয়ে গ্রামবাসীরা চরম আতঙ্কে রয়েছে। তাই আমরা চাই না আমাদের গ্রামেও বাইরে থেকে আসা কোনও পরিযায়ী শ্রমিক এই সেন্টারে আশ্রয় নিক।

স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ ব্যাপারী জানান, বাইরের লোককে কোনোভাবেই আমরা এই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখতে দেব না। এই মারণ রোগে এলাকার কারোর যদি কিছু হয় তাহলে তারা কোথায় যাবে? বাইরের লোকদের দিয়ে এলাকার সেন্টার ভর্তি করলে গ্রামে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল।

সিপিএমের নাকাশিপাড়া উত্তরের এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজ্জাক আহমেদ জানান, পরিযায়ী শ্রমিকরা যেখানেই কাজ করুক তাদের সমস্ত সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব সরকারের। সরকার কেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাইরে থেকে যারা আসছেন তাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ১৪ দিনের যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার সেই সেন্টার কোথায় হবে সেই সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে।

নাকাশিপারা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অশোক দত্ত জানান, নাকাশিপাড়ায় মোট ১৯৭টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হয়েছে। আমরা সরকার থেকে ঠিকই করেছি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে এলাকার লোকই থাকবে। যদি ওই এলাকার হয় তাহলে থাকবে, যাতে বাড়ি থেকে সেন্টারে খাবার পৌঁছানো যায়। এই নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ওপর থেকে নির্দেশ আছে যে সমস্ত স্কুল গুলোকে পরিষ্কার রাখা। সেদিন কয়েকজন ওখানে গেছিল ওই স্কুল পরিষ্কার করতে। ওরা গতকাল ভেবেছিল যে ওখানে লোক ঢুকে যাচ্ছে। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

নদীয়া জেলা তৃণমূলের তপশিলি মোর্চার সহ-সভাপতি বৃন্দাবন প্রামানিক জানান, সরকারের যে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থাকবে সেখানে এলাকার বলে কোনও ব্যাপার নেই। পরিযায়ী শ্রমিক যারা বাইরে থেকে আসবে তারাও ১৪ দিন ওই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকবে। এখন রাজনীতি করার সময় নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই আছে যে এখন সব মানুষকেই পরিষেবা দিতে হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন বিজেপি সিপিএম এই সময়ে মানুষকে বাঁচাবার চেষ্টা না করে রাজনীতি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *