Bharatiya Kisan Sangha, গো-মাতা পূজনের গুরুত্ব আলোচনা করল ভারতীয় কিষাণ সংঘ

পারুল খামারিয়া, আমাদের ভারত, কলকাতা, ৩১ অক্টোবর: বুধবার ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’-এর পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের পক্ষ থেকে ‘বাঁধনা পরব’, গোবর্ধন পূজা ও ‘গোপাষ্টমী’র গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয় একটি আন্তর্জাতিক সভায়। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের সদস্যবৃন্দ।

শুরুতেই বাঁধনা পরব নিয়ে আলোচনা করেন ড: অলি ব্যানার্জি। তিনি জানান, কালীপুজোর সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষজন মেতে ওঠেন বাঁধনা পরবে (Badna Parab)। এ জেলাগুলির মানুষের অন্যতম প্রাণের উৎসব হল এই বাঁধনা পরব। কালীপুজোর অমাবস্যার রাত থেকে উৎসবে মেতে ওঠেন ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের তামাম গ্রাম বাংলার মানুষ। মূলত গো বন্দনা হিসেবে এই উৎসব বেশি পরিচিত। বাঁধনা পরব আসলে আমন ধান বাড়িতে তোলার আগে গরু-গাভীদের বন্দনা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি। এই পরবে তিনদিন ধরে গরুদের পেট ভরে ঘাস, খড় খাওয়ানো হয়। তারপর গরুগুলিকে স্নান করিয়ে বিভিন্ন রং দিয়ে সারা শরীরে ছোপ দেওয়া হয়। বিকেলে হয় গরু খুঁটা। যাতে একটি খুঁটিতে গরুকে বেঁধে তাকে একটি মৃত গরুর চামড়া শুঁকিয়ে উত্যক্ত করা হয়। আর সমান তালে চলে ঢোল নাগড়া বাজানো, পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে এই রীতি গরু খুঁটা বলে পরিচিত। গ্রামের সকলেই এতে উপস্থিত হন।

এরপর গো-মাতা পূজন নিয়ে আলোচনা করেন অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য কল্যাণ কুমার মন্ডল। দেশি গোমাতা পালন করার কথা বলেন তিনি। গো-মাতা পূজনের পাশাপাশি গো-মাতা রক্ষাও করতে হবে আমাদের। গো-মাতার দুধ খেয়েই আমরা বড়ো হয়েছি। সেই গো-মাতা নিধন করা হচ্ছে দেখে আমরা ব্যথিত।দেশী গো-মাতা সংরক্ষণ করতে হবে। যেভাবে শংকর প্রজাতি তৈরি করা হয়েছে আমরা তার বিরোধিতা করছি। শংকর প্রজাতির গরুর দুধ হল A1 দুধ। এই দুধ খেলে ক্ষতি হয়। কিন্তু আমাদের দেশি গো-মাতার দুধ A2 গুণ সম্পন্ন। এই দুধ শরীরের জন্য উপকারী। তাই দেশি গো-মাতা পালন করতে হবে।

তারপর গোপাষ্টমী নিয়ে আলোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার। তিনি বলেন, শান্ডিল্য মুনির পরামর্শ অনুসারে এই দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম প্রথম গো-মাতা পালন করতে গোচারণে যান। কার্তিক মাসের অষ্টম চন্দ্র দিন ‘গোপাষ্টমী’ নামে পরিচিত। এবার ৯ই নভেম্বর’২৪ পড়েছে, শনিবার। এই দিনই রাধারাণীর চরণ কমল দর্শন করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ – বলেও জানান তিনি।

এই সভায় সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সভাপতি অনিমেষ পাহাড়ি। তিনি বলেন, “বাঁধনা পরব, গোবর্ধন পুজো ও গোপাষ্টমী- যাদের বাড়িতে গো-মাতা আছে তারা সবাই পালন করুক, এই আবেদন জানাই।গো-মাতাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। জনমানসে সেই সচেতনতা আসুক এই পরবগুলো পালনের মধ্যে দিয়ে।”

এই সভার সঞ্চালনায় ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের প্রচার প্রমুখ ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক মিলন খামারিয়া। সভাতে দেশি গো-সম্পদের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন প্রান্তের কার্যকারিণী সদস্য সুজিত কাপাসি। সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রমিতি রায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রান্তের সংগঠন মন্ত্রী অনিল রায়। শান্তি মন্ত্র পাঠ করে সভা শেষ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *