ভাষাদিবস! নিজের ইতিহাসই জানে না বাঙালি, ধরে ফেলল ‘ঐক‍্য বাংলা’

চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ২২ ফেব্রুয়ারি: প্রতিবাদের লগ্নে জন্ম হয়েছে ‘ঐক‍্য বাংলা’ সংগঠনের। জন্মবছরে সংগঠনের প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনেও ধরা পড়ল সেই প্রতিবাদেরই ছোঁয়া। যার মধ‍্যে মিশেছিল অভিনবত্ব। সংগঠনের অন‍্যতম নেতা অভিজ্ঞান সাহা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকাল থেকেই ‘ঐক‍্য বাংলা’র সদস‍্যরা পথে নেমেছিলেন। ভাষা স্মারকে ফুলমালা দিয়ে ক‍্যামেরা ডেকে ছবি তোলানোর জন‍্য নয়। মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে বাঙালিকে সচেতন করার চেষ্টাই ছিল তাঁদের পথে নামার লক্ষ‍্য। সেই লক্ষ‍্য পূরণ করতে, ‘ঐক‍্য বাংলা’র সদস‍্যরা ছড়িয়ে পড়েছিলেন কলকাতা থেকে শহরতলির আনাচ-কানাচে। জনে জনে পথচলতি মানুষকে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য কী?’

উত্তর যা মিলেছে, তাকে রীতিমতো বিশ্লেষণের ছাঁকনিতে চেলে নিয়েছে এই সংগঠন। ‘ঐক‍্য বাংলা’র সেই বিশ্লেষণের ছাঁকনি বলছে, একুশে ফেব্রুয়ারি কেন ‘আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস’, সে সম্পর্কে জানেন শ্যামবাজারের মাত্র ৫০%, গড়িয়াহাটের ৩৫%, যাদবপুরের ৮০%, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের ৬০%, উত্তর ২৪ পরগনার লেকটাউনের ৭৫% এবং খড়দার মাত্র ৪৫% বাঙালি। আর এই পরিসংখ্যানই ‘ঐক‍্য বাংলা’র কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে, আত্মঅধিকারের লড়াইয়ে বাঙালির গলদ তার চেতনায়।

বাঙালির ভাষা-অধিকারের লড়াইয়ের রক্তমাখা ফল ২১ ফেব্রুয়ারির ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’ বাঙালি-অধ‍্যুষিত খোদ কলকাতা আর শহরতলির বাঙালিই যেখানে সেই ব‍্যাপারে সচেতন নন, সেখানে বাঙালির অধিকারের লড়াই এদেশে ধাক্কা খেতে বাধ‍্য। সেই ধাক্কা ঠিক কতটা, ভাষাদিবসে দিল্লিতেও তার হদিশ করেছে ‘ঐক‍্য বাংলা।’ সেই হদিশের পর, সংগঠনের দিল্লির নেতা সৈকত পোদ্দারের উপলব্ধি, ‘দিল্লির মানুষ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস সম্পর্কে প্রায় কেউই জানেন না।’ এই উপলব্ধি থেকে সৈকতের প্রশ্ন, ‘হিন্দি ভাষার সম্মানে যদি রাষ্ট্রপুঞ্জ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ঘোষণা করত, তাহলে কি ভারতের কোন রাজ্যের বাসিন্দারা সেই সম্পর্কে এতটা অচেতন থাকতেন?’

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস বলে কথা। তা নিয়ে এতটা উদাসীনতা কেন? তাহলে যে বছর বছর ঘটা করে বাংলার কিছু পাকাচুলো নেতা-নেত্রী এই দিনটাকে বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দেন! কয়েকটা অনুষ্ঠান করে এমন ভাব দেখান যেন তাঁদের ভাষা-ঠিকেদারির দিকে তাকিয়ে বাকি বিশ্ব! এই বিতর্কে ঢুকতে নারাজ ‘ঐক‍্য বাংলা’র নেত্রী সুলগ্না দাশগুপ্ত। শুধু বললেন, ‘আমরা মাঠে নেমে প্রকৃত সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। ১০ জন অচেতন বাঙালিকেও যদি আমরা ভাষা দিবসের ইতিহাসের কথা জানাতে পারি, তাতেই নিজেদের ধন‍্য মনে করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *