নবান্ন অভিযানকে গণআন্দোলনের রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা, বাহুবলীর মতো ত্রিফলা আক্রমণের প্রস্তুতি বঙ্গবিজেপির

আমাদের ভারত, ১০ সেপ্টেম্বর:
সম্ভবত বাহুবলী সিনেমার বাস্তবে রূপান্তর দেখতে পাবো আমরা ১৩ সেপ্টেম্বর। হ্যাঁ মঙ্গলবার এক দুর্দান্ত রণকৌশল নিয়ে তিলোত্তমার রাজপথ কাঁপানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। নবান্ন অভিযানের জন্য শুক্রবার সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে বঙ্গ বিজেপি। একেবারে বাহুবলী কায়দায় ত্রিফলা আক্রমণের ভাবনায় তিন দিক থেকে তিনটি মিছিল করে নবান্ন অভিযান করবে বিজেপি বলে সূত্রের খবর। কার্যত নবান্ন অভিযানকে গণআন্দোলনের রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

সিদ্ধান্ত হয়েছে মোট তিনটি মিছিল তিন দিক থেকে এগিয়ে যাবে নবান্নের দিকে। নিরাপত্তায় ঘেরাটোপ পেরিয়ে মিছিল নিয়ে কতদূর পর্যন্ত এগোনো সম্ভব হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ঠিক করা হয়েছে প্রতিটি মিছিলকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নবান্ন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হবে। বঙ্গ বিজেপিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে নবান্ন অভিযানকে গণ আন্দোলনের রূপ দিতে হবে।

এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সংখ্যায় জমায়েত করতে হবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল থেকেও যাতে ভালো সংখ্যক মানুষ নবান্ন অভিযানে অংশ গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রাথমিক ভাবে গ্রামের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা হয়ে যাবে নেতৃত্বের।

সূত্রের খবর, চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরবঙ্গ থেকে আসা সমস্ত কর্মী-সমর্থকরা শিয়ালদা ও কলকাতা স্টেশনে নেমে চলে আসবেন কলেজ স্ট্রিটে। মুর্শিদাবাদ নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা কর্মীরাও পৌঁছে যাবেন সেখান। এই মিছিলের নেতা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

অন্যদিকে হাওড়া স্টেশনে আসা দলীয় সমর্থকরা চলে যাবেন হাওড়া ময়দানে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, হুগলির কর্মীদের জমায়েত হবে হাওড়া ময়দানে। সেই মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

তৃতীয় মিছিলটি শুরু হবে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে। সেটির নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুই মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের যে কর্মীরা সড়কপথে আসবেন তাদের জমায়েত হবে সাঁতরাগাছিতে। শুভেন্দু অধিকারী মিছিল নিয়ে সাঁতরাগাছি থেকে সোজা এগোবেন নবান্নের দিকে। ওই মিছিলের নেতৃত্বে শুভেন্দু ছাড়াও থাকবেন রাহুল সিনহা, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ।

সুকান্তর মিছিল ময়দান থেকে রবীন্দ্র সেতু পার হয়ে গিয়ে ব্রাবোর্ণ রোড ধরে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর রাস্তা ধরবে। এই মিছিলে সুকান্তর সঙ্গে থাকবেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রি সুভাষ সরকার ও শান্তনু ঠাকুর। এছাড়া থাকবেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, শমীক ভট্টাচার্য, সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া।

দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন মিছিলে থাকবেন সাংসদ জগন্নাথ সরকার, বিধায়ক দীপক বর্মন, প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। এই মিছিলটি কলেজস্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলা হয় বিদ্যাসাগর সেতু ধরবে।

এই নবান্ন অভিযানকে লক্ষ্য করে নিজেদের শক্তি যাচাইয়ের পরীক্ষাও দেবে বঙ্গ বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে নবান্ন অভিযানে যোগদান করানোর অর্থ হবে রাজ্যের শাসক দলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া।

নবান্ন অভিযানে পুলিশ আটকালে কি হবে? এ বিষয়ে হুংকার দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেছেন, “আমরা কর্মীদের বলেছি শান্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে। তবে পুলিশ যদি অতি সক্রিয়তা দেখায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেখানেই। আমরা আগেও পুলিশের অতি সক্রিয়তা দেখেছি। নবান্নের আগে আমাদের আটকে দিলে ভালো। কিন্তু যদি শুরুতেই আটকে দেয় তবে শঠে শঠ্যাং তো করতেই হবে।

নবান্ন অভিযানকে ঘিরে বঙ্গ বিজেপি জেলায় জেলায় লাগাতার প্রচার চালিয়েছে। কোথাও আইন অমান্য, কোথাও মিছিল, কোথাও বড় সভা। বলা যায় এই নবান্ন অভিযানকে ঘিরে পদ্ম শিবির সংগঠনের তৃণমূল স্তরে নেমে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। এখন দেখার সেই চেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *