সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২০ ফেব্রুয়ারি: কাজ বন্ধ রেখে সোমবার নিজেরাই স্বেচ্ছায় রক্তদান করলেন বড়জোড়ার তারা সিং এলাকার গ্যারাজ কর্মীরা। গ্যারাজ বন্ধ মানেই একদিনের উপার্জনও বন্ধ। খেটে খাওয়া এইসব কর্মীদের এই উদ্যোগকে তারিফ করেছেন বড়জোড়ার নাগরিক সমাজ।
শিল্পাঞ্চলে যেমন অসংখ্য কল কারখানা গড়ে উঠেছে তেমনি অনুসারি শিল্পও কর্মসংস্থানের পথ করে দিয়েছে। ফলে এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে তাল মিলিয়ে। আর গাড়িঘোড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে গ্যারাজের সংখ্যাও। এখানের তারা সিং এলাকায় রাস্তার দু’পাশে গাড়ি মেরামতির অসংখ্য গ্যারাজ রয়েছে। এই গ্যারাজের কর্মীরা কেউ বিহারের তো কেউ উত্তর প্রদেশ বা ঝাড়খন্ড কিংবা উত্তরবঙ্গের মানুষ। হিন্দু মুসলমানের সমাহারে কর্মীরা একাকার হয়ে পরিবার ছেড়ে বাস করেন। এই কর্মীরা মিলে তারসিং সংলগ্ন সমস্ত গ্যারাজ একদিন বন্ধ রেখে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেন। এই নিয়ে তৃতীয়বার।
রক্ত দিয়ে ভীষণ খুশি বুধেশ্বর বিশ্বকর্মা, শেখ রহমান, ভোলানাথ শর্মা, শেখ ইসমাইল। বুধেশ্বর বলেন, এখানে আপনজন বলতে ভিন্ন প্রদেশের, ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন ভাষার সহকর্মীরাই। সকাল থেকে গাড়ির মালিকদের বিকল হয়ে পড়া গাড়ি সারাইয়ের কাজ করি। তেল কালি মেখে সন্ধ্যার পর নিজেদের ক্লান্ত শরীরটা ঝুঁকে পড়ে। মানুষ ভাবতে কষ্ট হয় নিজেদের। খিস্তি খেউড় শুনতে শুনতে গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। তাই কোনোদিন সমাজের কোনো ভালো কাজে আমাদের অবদান থাকবে তা মনে হয়নি। ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কাঞ্চন বিদ আমাদের রক্তদান করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এবারও আমরা বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় রক্তদান শিবির করলাম।
সামনে গ্রীষ্ম আসছে। রক্ত সংকট দেখা দেয় এই সময়টায়। তাই এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন বলে জানান গ্যারাজ কর্মী ভোলানাথ শর্মা। তিনি বলেন, এদিন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এই রক্ত সংগ্ৰহ করেছেন। ১ জন মহিলা সহ ৪৮ জন গ্যারাজ কর্মী রক্তদান করেছেন।
এদিনের রক্তদান সম্পর্কে কাঞ্চন বিদ বলেন, এই সব প্রান্তিক মানুষদের দেশের কাছে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার নূন্যতম রসদটুকু ছাড়া বাড়তি কোনো চাহিদা নেই। কিন্তু সমাজে এরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।