আমাদের ভারত, ১৪ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ পুলিশের তরফে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় আরো চার অভিযুক্তকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই খবর ইউনুস সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে।
প্রেস উইং বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকান, বাজার এবং স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে হামলার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরফলে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মোট ৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও মোট ৮৮টি ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাফিকুল আলম জানিয়েছেন।
সোমবার ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকা শহরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে এসেছিলেন সে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় ভারত সরকার ক্ষুব্ধ। বিদেশ সচিবের ঢাকা সফরের পরের দিনই বাংলাদেশ সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরেও চাপ বজায় রেখেছে ভারত সরকার। তার সঙ্গে যুক্ত হয় মার্কিন প্রতিক্রিয়া। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করেছে। রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাগুলি নিয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘটনাগুলি নিয়ে লাগাতার আলোচনা চালাচ্ছে বলেও জানানো হয়।
আবার শুক্রবারে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর লোকসভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায় সে দেশের সরকারের। বাংলাদেশের স্বার্থে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি। আর দেখা গেল তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ আরো একটি হামলার ঘটনায় পদক্ষেপ করল।
বাংলাদেশ সরকার যে চাপে পড়েছে তার প্রমাণ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর তৎপরতা। পুলিশ সদরের পাশাপাশি প্রেস উইং আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সংবাদ মাধ্যমকে জানাচ্ছে। বাংলাদেশের মিডিয়া গুরুত্ব সহকারে খবরগুলি প্রকাশ করছে। এর থেকে মনে করা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনাগুলিকে মান্যতা দিতে শুরু করেছে ইউনুস সরকার।
ভারতের বিদেশ সচিবের ঢাকা সফরের আগে অভিযোগগুলিতে অতিরঞ্জিত বলা হয়েছিল। খোদ সরকারি মহল থেকেও তাই বলা হয়েছিল। সম্প্রতি সরকারি কর্তারা সে কথা বলা বন্ধ করলেও বাংলাদেশ সরকার নতুন কৌশল নেয়। সে দেশের নাগরিক সমাজের একাংশ বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করে, সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ ভারতীয় মিডিয়ার ষড়যন্ত্র। কিন্তু ভারত- মার্কিন দ্বৈত চাপের কাছে নতি স্বীকার করে হিন্দু নির্যাতনের আরও একটি ঘটনায় পদক্ষেপ করছে বাংলাদেশ সরকার।
সুনামগঞ্জের ঘটনাটি চলতি মাসের ৩ তারিখের।সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার থানার মংলার গাঁও গ্রামের। ওই এলাকার হিন্দুদের বাড়ি- ঘরে হামলা চালায় মৌলবাদীরা। আক্রমণ করা হয় লোকনাথ মন্দিরেও। ওই ঘটনায় পুলিশ শনিবার ১২ জনের নামসহ মোট ১৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আলিম হোসেন, সুলতান আহমেদ রাজু, ইমরান হোসেন, শাজাহান হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ৩ তারিখের ঘটনায় ১৪ তারিখ পদক্ষেপ করল পুলিশ। ফলে এটাকে চাপে পড়ে পদক্ষেপ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।