বনধ নিরর্থক পুরুলিয়ার কৃষকদের কাছে

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ৮ ডিসেম্বর: “ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত আর একটু নুন”। কবির এই কথা যেন বড্ড বেশি মানানসই হল পুরুলিয়ায়। তাঁদের সংগঠিত মঞ্চের ২৪ ঘণ্টার বনধে পেটের টানে সবজি নিয়ে হাটে বাজারে এলেন কৃষকরা। বিক্রি করলেন অন্যদিনের মতো। বনধ প্রতিবাদের রাজনৈতিক ভাষা হলেও পেট ভরায় না ওদের। কথাগুলো বলছিলেন পুরুলিয়ার বড় হাটে আসা কৃষকরা। পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক এই হাটে তাঁদের খামার থেকে সবজি নিয়ে আসেন। অধিকাংশই নিজেরা বিক্রি করেন। তাঁদের মধ্যে কোটলই গ্রামের ভৌমিক কুমার। তাঁর ১০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করে। সেটাই তাঁর জীবিকা। বাড়ির সবাই এই কাজে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত থাকেন। তিনি এদিন হাটে সবজি বিক্রি করতে করতে বলেন, “কৃষি আইন জানি না। আর বনধ কেন বা কার জন্য তাও জানি না। যাঁদের স্বার্থ রয়েছে তাঁরা বনধ মানেন।”

শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক সঞ্জয় মাহাতো বলেন, “বনধ করে আমাদের পেট ভরবে না, সংসারও চলবে না। তাই, খেত থেকে সবজি তুলে হাটে বিক্রি করতে এসেছি।” এদিন পুরুলিয়ার বিভিন্ন হাটে আসা কৃষিজীবী মানুষ ও কৃষকরা বনধের পক্ষে সায় দেননি। আর তাই, বনধ নিরর্থক হয়ে উঠল পুরুলিয়ার কৃষকদের কাছে।

কৃষকদের যদি বিভাজন না হয়ে থাকে তাহলে প্রগতিশীল ও প্রান্তিক চাষি পুরুলিয়া জেলার ক্ষেত্রে সমগোত্রীয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মরসুমের পর মরসুম চাষ করেন ওঁরা। ফসল ও সবজি চাষই পুরুলিয়ার কৃষকদের রুজি রুটি। তাঁদের স্বার্থে গঠিত কৃষি আইন সম্পর্কে অবগত নন অধিকাংশই।  মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করা ফলন বিক্রি করে হাসি মুখে বাড়ি ফিরতে অভ্যস্থ ওঁরা।

অন্যদিকে, কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে ডাকা বনধে মিশ্র প্রভাব পড়ে পুরুলিয়া জেলায়। এদিন সকাল থেকেই পুরুলিয়া শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেসরকারি বাস রাস্তায় না নামলেও সরকারি বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বনধকে ঘিরে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে রাস্তার মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছিল। সকালে পুরুলিয়া জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন ব্লক এলাকায় বনধের সমর্থনে মিছিল করে সিপিএম। পুরুলিয়া শহরে মিছিল করে এসইউসিআই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *