রাজেন রায়, কলকাতা, ২৮ নভেম্বর: যতদিন সরকারের অন্দরে কোনও নেতা থাকেন, ততদিন তাঁর কোনও দোষ দেখতে পায় না শাসক দল। কিন্তু দল ছাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসে। ঠিক যেমন ব্যারাকপুরের ভাটপাড়া সাংসদ অর্জুন সিং যতদিন তৃণমূলে ছিলেন, তার বিরুদ্ধে ছিল না একটিও অভিযোগ। কিন্তু তিনি বিজেপিতে যোগদান করতে তার বিরুদ্ধে এখন এক বছরে ৪৩ টি মামলা দায়ের করেছে রাজ্য প্রশাসন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দলবিরোধী না হলে তাহলে কি দলের অন্দরেই এ ধরনের অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয় খোদ শাসক দল?
শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও এখনো বিধায়ক পদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু শুভেন্দু ধীরে ধীরে বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছেন ধরে নিয়েই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সিআইডির তদন্তের বেশকিছু পথ খোলা রাখতে চাইছে শাসক দল। শুক্রবার রাত থেকেই সেই সমস্ত সূত্রগুলো ধরে নাড়াচাড়া শুরু করেছেন সিআইডি গোয়েন্দারা।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জঙ্গলমহলে দলের সংগঠন দেখতেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সূত্রে মাওবাদীদের সঙ্গে শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা ও তাঁদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর আলোচনা শুভেন্দু নিজেই করতেন। সম্প্রতি ছত্রধর মাহাতো ও সুচিত্রা মাহাতোর মাধ্যমে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে পেরেছে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের সময় বেশ মোটা অঙ্কের তহবিল শুভেন্দু অধিকারীর হাতে এসেছিল। যার পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সেই টাকা কোথায় গেল বা কোন ঘটনার ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা হয়েছে বা এই ঘটনা আদৌ সত্য কিনা তা নিয়ে এবার তদন্তে নামছে সিআইডি। এর জন্য ছত্রধর মাহাতো, সুচিত্রা মাহাতোর সঙ্গে সিআইডি আধিকারিকরা কথা বলার পাশাপাশি যে সব মাওবাদী রাজ্য সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করেছে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা শুরু করতে চলেছে। একই সঙ্গে শুভেন্দু জমানার সেচ ও পরিবহণ দফতরের একাধিক বিতর্কিত ও মোটা অঙ্কের ফাইল নিয়েও নাড়াচাড়া শুরু করেছে সিআইডি। রাজ্যের ফেরি ঘাট সংস্কারে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মোটা অঙ্কের টাকার টেন্ডার পেপার নিয়ে বেশকিছু গরমিল খুঁজে পেয়েছেন সিআইডি আধিকারিকেরা।
এর পাশাপাশি জানা গিয়েছে, শহরের এক অতিথিশালায় কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কর্তা রাজীব কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সিআইডি ও কলকাতা পুলিশের কিছু অফিসার। সেই বৈঠকের নেপথ্যেও রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয়। তাই সবমিলিয়ে বলাই যায়, সরাসরি না হলেও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আইনে মামলা মোকদ্দমার পথ খোলা রাখতে চাইছে সিআইডি তথা রাজ্য প্রশাসন।