আমাদের ভারত, ২২ ফেব্রুয়ারি: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের অশান্ত সন্দেশখালি। শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানার সামনে ধর্নায় বসা সুকান্তবাবুকে তুলে দেয় পুলিশ। অভিযোগ, তিনি ১৪৪ ধারা ভেঙেছেন। থানার সামনে ধর্না করতে দেওয়া যাবে না। তাঁকে সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে আটকের পর টোটোয় চড়িয়ে একেবারে সন্দেশখালির ঘাটে নিয়ে গিয়ে লঞ্চে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের বোটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর প্রতিবাদে বিজেপির রাজ্য সভাপতির প্রশ্ন, ১৪৪ ধারা কি কেবলমাত্র বিজেপির জন্য?
পুলিশের বক্তব্য, সুকান্ত মজুমদার ১৪৪ ধারা ভেঙেছেন। কিন্তু সুকান্তবাবু এর পাল্টায় প্রশ্ন তুলেছেন, সিপিএমের লোকজন ঢুকছে, স্থানীয় বিধায়ক ৫০ জন লোক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন পুলিশের ১৪৪ ধারা কি চোখে পড়ে না? নাকি তখন পুলিশের চোখে ন্যাবা হয়? শুধু বিজেপির জন্যই কি আলাদা করে ১৪৪ ধারা হয়? ভারতবর্ষের সংবিধানে কি এমন কোনো আইন রয়েছে? সংবিধানে কি এমন কোথাও লেখা আছে শুধুমাত্র বিরোধীদের জন্য ১৪৪ ধারা লাগু হবে?
সুকান্ত মজুমদার বলেন, আমাদের একটাই দাবি ছিল, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে হবে। এই দাবিতেই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ বিনা প্ররোচনায় যে ধরনের আচরণ করেছে, গণতন্ত্রে এই আচরণ কখনোই কাম্য নয়। এরপরই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি এই জেলার এসপি, ডিজি ভেবে থাকেন কপিল সিব্বলের আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাকবেন, সেটা কিন্তু হবার নয়। আমরাও সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি। আমাদের আইনজীবী যাচ্ছেন। প্রয়োজনের জেঠ মালানির মত আইনজীবী দাঁড়াবেন এবং আগের ঘটনায় তাদের প্রিভিলেজ কমিটির সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য করবে।
আজ একাধিক বাধা পেরিয়ে সন্দেশখালিতে যান সুকান্ত মজুমদার। এরপর তিনি সেখানকার থানার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে থানার মূল গেটেই তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি ধর্নায় বসে পড়েন। বলেন, শাহজাহানকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত উঠবেন না। তাঁকে ঘিরে সমর্থকদের ভিড় জমে যায়।
ঘণ্টাখানেক ধর্না অবস্থান চলার পরেই ১৪৪ ধারার কারণ দেখিয়ে অবস্থান তুলে নিতে বলে পুলিশ। হঁশিয়ারি দেওয়ার পর সুকান্ত মজুমদারকে ৫ মিনিটের সময় দিয়েছিল পুলিশ। বলা হয়েছিল, থানার সামনে থেকে উঠে যেতে। সেই নির্দেশ না মানায় বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে আটক করে পুলিশ। একগুচ্ছ উর্দি পড়া পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে সুকান্ত মজুমদারের ওপর।
সেই সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের বচসা শুরু হয়। তার মাঝেই পুলিশ সুকান্তকে সেখান থেকে টেনে সরিয়ে টোটোয় করে ফেরিঘাটের দিকে নিয়ে যায়। এরপর লঞ্চে করে বিজেপি নেতাকে ধামাখালি নিয়ে যায় পুলিশ। নদীতে এই যাত্রার সময়েই ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় সুকান্তকে। মুঠোফোনে সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, “পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করেছিল। জামিনে মুক্তিও দিয়েছে। কিন্তু আমি এখন কোথাও নড়ব না। আমার দলের কর্মী-সমর্থকরা যতক্ষণ না আসবে, আমি কলকাতা ফিরব না।”
ফেরিঘাটের কাছেই সংবাদমাধ্যকে আটকে দেয় পুলিশ। তা সত্বেও বিজেপি-র মিডিয়া হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ঘটনার ভিডিও দেওয়া হয়েছে। জানাগেছে, নতুন করে আরও ৯ জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই পুলিশ সুকান্ত মজুমদারকে অবস্থানে আর বসতে দেয়নি।