সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৩ আগস্ট: এক সপ্তাহের মধ্যে ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ল ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শাট ডাউন থাকা ২ নম্বর ইউনিটের ৬.৬ এলাকায় কাজ করতে গিয়ে ডিভিসির এক ইঞ্জিনিয়ার ও ৪ জন ঠিকা শ্রমিক ব্রেকার ব্লাস্ট করে আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর সোমবার ফের কর্মরত এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হলো। এই ঘটনায় ডান- বাম সমস্ত শ্রমিক
সংগঠনগুলি ডিভিসি কর্তৃপক্ষের শ্রমিক সুরক্ষার ব্যাপারে গাফিলতির অভিযোগ এনেছে। ঘটনার জেরে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়।
গতকাল সন্ধে ৬টা নাগাদ প্রকল্পের ৫ ও ৬ নম্বর ইউনিটের টিপি-১১ এলাকায় এক শ্রমিক বেল্টে জড়িয়ে রোলারে চাপা পড়ে। ঘটনাচক্রে ঐদিনই বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন ফ্যাক্টরি অফিসার। ঠিক সেই সময় বিদ্যুৎ ভবনের কনফারেন্স রুমে বিদ্যুৎ প্রকল্পের চিফ জেনারেল ম্যানেজার সহ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন তিনি। খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাদের ঘিরে ধরে বি শিফটে কর্মরত প্রকল্পের সমস্ত ঠিকা শ্রমিক বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সব জায়গার কাজ বন্ধ করে দেন তারা।
জানাগেছে, ওই ঠিকা শ্রমিকের নাম অনন্ত ওরফে নাড়ু ঘোষ (৪৯)। বাড়ি গঙ্গাজলঘাঁটি থানার বাঁকদহ গ্রামে। তিনি প্রায় ১৬ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থায় কাজ করছেন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঠিকা শ্রমিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বার্ষিক মেইনটেনেন্সের কাজের সাথে যুক্ত। তারা কোনো শ্রমিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় না থেকে একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করেছেন। তাদের নেতা প্রণব কর্মকার, উজ্জ্বল ঢাং, গৌর কুন্ডুরা বলেন, শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যপারে ডিভিসি ও ঠিকা সংস্থা একেবারে উদাসীন। আমরা জীবন হাতে নিয়ে কাজ করি। সব জায়গায় একা একা কাজ করতে হয়। সেখানে ডিভিসির ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান এবং কোম্পানির সুপারভাইজার থাকা উচিৎ। কিন্তু আমাদের জোর করে একা একাই ওই বিপদজনক জায়গায় কাজ করতে হয়। এভাবেই গত মার্চ মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে ২ জন শ্রমিক মারা যান।
এদিন পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে এলে সঙ্গে সঙ্গে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং একজনকে কাজে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি না পেলে মৃতদেহ তুলতে দেওয়া হবে না বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টা নাগাদ ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সাথে ঠিকা সংস্থা ও শ্রমিকদের মধ্যে লিখিত চুক্তি হয় যে, মৃতের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য ৫০ হাজার এবং ১ জনের নিয়োগ পত্র দেওয়া হবে মঙ্গলবারের মধ্যে। রাত সাড়ে ১১টায় প্রকল্পের হাসপাতাল মর্গে মৃতদেহ আনা হয়। এদিন চুক্তিপত্র অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পেয়ে মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য ছাড়া হয়।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মী সংগঠনের আইএনটিইউসি নেতা অরিন্দম ব্যানার্জি, সিটু নেতা সুমন গোস্বামী ও স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিদ্যুৎ কর্মকার বলেন, ডিভিসিতে দীর্ঘদিন কর্মী নিয়োগ বন্ধ। প্রায় সমস্ত দক্ষ কর্মী অবসর নিয়েছেন। ডিভিসির নিজস্ব দক্ষ কর্মীর অভাবেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান এক আধিকারিক।