আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ৬ অক্টোবর: চিকিৎসককে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতিবাদে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তাদের দাবি, মানব দরদী চিকিৎসককে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। ঘটনাটি ঘটেছে, বীরভূমের মুরারই ১ নম্বর ব্লকের চাতরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
এলাকার ৩০টি গ্রামের মানুষ ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে কোনো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক নেই। ফলে দুই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল এলাকার মানুষ। দু’জন নার্স সপ্তাহে ছয়দিন করে ডিউটি করেন। অন্যদিকে দুই চিকিৎসক তিনদিন করে ডিউটি ভাগ করে নিয়েছেন। শনিবার রাতে চিকিৎসক চয়ন মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রামপুরহাট থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন এক নার্স। তাঁর বাড়ি চাতরা গ্রামেই। অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের বাড়ি থেকে চিকিৎসককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন তাঁকে রামপুরহাট মহকুমা বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এদিকে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে এই দাবি তুলে রবিবার সকাল থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের একাংশ। তাদের দাবি, ভগবানের মতো চিকিৎসককে ফাঁসানো হয়েছে। অবিলম্বে চিকিৎসককে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।
হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী রানা মাল বলেন, “চিকিৎসকের কোনো অপরাধ নেই। এখানে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। ডিউটির সময় সর্বক্ষণ একজন সিভিক থাকেন। ধর্ষণ হয়ে থাকলে তারা জানতেন। আসলে ওই নার্সের সঙ্গে তাঁর স্বামীর অশান্তি চলছে। তাই তিনি অভিযুক্ত চিকিৎসককে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। ব্ল্যাকমেল করে চিকিৎসককে বিয়ে করতে চাপ দিতেন। কিন্তু চিকিৎসক তাঁর কথা না শোনায় মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। অবিলম্বে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হোক”।
গ্রামের বাসিন্দা মেহেবুব, কুদরত শেখ, রসিদা বিবি বলেন, “নার্সের চরিত্র ভালো নয়। নিজের স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। হাসপাতালে ডিউটি না করে শুধু ফোন কানে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওই চিকিৎসক নিয়মিত ডিউটি করতেন। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চিকিৎসককে ফাঁসানো হয়েছে। তারই প্রতিবাদে আমরা হাসপাতালে জমায়েত হয়েছি। চিকিৎসকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে”।
গ্রামের বাসিন্দা মহরম খাঁ বলেন, “হাসপাতালের দেওয়ালের পাশেই আমার বাড়ি। ওই চিকিৎসক রাত পর্যন্ত ডিউটি করতেন। উনি অনেকদিন আগেই এখান থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবিতে তিনি থেকে যান। আর ওই নার্স দুশ্চরিত্র। ঠিক মতো ডিউটি করতেন না। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চিকিৎসকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা চাই চিকিৎসকের নিঃশর্ত মুক্তি। আর মিথ্যা অভিযোগের জন্য নার্সকে গ্রেফতার করা হোক।”
মুরারই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক অভিজিত মণ্ডল বলেন, “শনিবার ওই নার্স আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আমি বিষয়টি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানাই। এরপর আমরা নার্সকে নিয়ে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করিয়েছি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দেখবে”।
তবে অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওই অভিযোগকারিণী। উল্টে পুলিশ ডেকে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে সংবাদমাধ্যমকে সরিয়ে দেন।