সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৪ এপ্রিল: এক মাসের ব্যবধানে ফের জঙ্গল মহলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ৮ এপ্রিল রাইপুরে জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি খাতড়ায় প্রশাসনিক সভা করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর এই সভা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। বিরোধীরা প্রশাসনিক সভার মোড়কে দলীয় সভা বলেও কটুক্তি করেন। ফের তার এই সফর ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার দুটি আসনেই হার মানতে হয় তৃণমূলকে।বাঁকুড়া লোকসভা আসনে পোড় খাওয়া রাজনীতি বিদ সুব্রত মুখার্জিকে প্রার্থী করেও বিজেপির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়। নির্বাচনী ময়দানে প্রথম বার প্রার্থী হয়ে প্রায় এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার ভোটে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী ডাঃ সুভাষ সরকার।
অপরদিকে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনটিও হাতছাড়া হয় তৃণমূলের।জেলায় প্রবেশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বিজেপির সৌমিত্র খাঁ জয় ছিনিয়ে নেন। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও জেলায় বারোটি আসনের আটটিতে জয়ী হয় বিজেপি।পরপর দুটি বড় নির্বাচনেই বাঁকুড়াবাসী শাসক দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় চিন্তিত তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা, মন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে জেলের ভিতরে। সর্বশেষ সন্দেশখালির ঘটনা জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে দল যে বেশ বেকায়দায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পরিস্থিতির সঙ্গে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে গোষ্ঠী কোন্দল। জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই একাধিক গোষ্ঠী।এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর বাঁকুড়া সফর বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। জেলায় ভোটারদের বড় অংশ তপশিলী এবং আদিবাসী। বিগত দুটি নির্বাচনে মুখ ফিরিয়ে ছিল তপশিলী ও আদিবাসী মানুষ।মূলতঃ ভোটারদের এই অংশকে নিজেদের পক্ষে আনাই মূল লক্ষ্য এই জনসভার। এমনই মত অভিজ্ঞ মহলের।
এদিকে এক মাসের ব্যবধানে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীল রুদ্র মন্ডল বলেন, এক মাসের ব্যবধানে দুবার মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গল মহলে এসে এলাকার মানুষের মন পেতে চাইছেন।কিন্তু উন্নয়নের ফাঁকা বুলি আওড়ালে কি আর মানুষের মন পাওয়া যাবে? মুখ্যমন্ত্রী আবার এসে কিছু প্রতিশ্রুতি হয়তো দেবেন। কিন্তু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বেশি দিন টেকে না।মানুষ সব বোঝে। ভোটের বাক্সে তার প্রমাণ মিলবে।
বিজেপির সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূল মুখপাত্র মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গল মহলকে ভালোবাসেন বলেই বার বার আসেন। তার আমলেই তো জঙ্গল মহলের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ঝাঁ চকচকে রাস্তা,পাকা বাড়ি সব হয়েছে।অথচ এই জঙ্গল মহলের মানুষে একসময় গাছের পাতা, পোকা খেয়ে দিনযাপন করতো।