ইউরোপে স্বীকৃতি বঙ্গললনা স্বাতী ঘোষের, প্রদর্শনীর উদ্বোধন

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ৫ অক্টোবর: দুর্গা পুজোর ডামাডোলে চাপা পড়ে গিয়েছে বঙ্গললনা স্বাতী ঘোষের সাফল্য। প্রায় চোখের আড়ালেই ক‘দিন আগে মিলানে একটি বড় স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। একমাত্র ভারতীয় শিল্পী হিসাবে ভারতের কনসাল জেনারেলের উপস্থিতিতে তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়। স্বাতীর শিল্পকর্ম ‘পাওয়ার অফ এনার্জি’ সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য শিল্পীদের সাথে প্রদর্শিত হয় বিখ্যাত ‘সানসিরো ইপোড্রোমে’।


স্বাতীর কথায়, “আমার পুরস্কারপ্রাপ্ত আঁকাটির নাম ছিল পাওয়ার অফ এনার্জি, যেখানে আমি জ্বলন্ত সূর্যের সামনে সাতটি ঘোড়া এঁকেছি। আমরা সবসময় ঘোড়াকে শক্তির সাথে যুক্ত হতে দেখেছি এবং আমরা এও জানি যে সূর্য হল শক্তির প্রধান উৎস যা পৃথিবীতে জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এছাড়া সূর্যের রশ্মি যা সাতটি রঙ ধারণ করে পৃথিবীকে আলোকিত করে অন্ধকার দূর করে এবং পৃথিবীর জীবনকে মহৎ কাজ করার ক্ষমতা দেয়। সেই কারণেই আমার পেইন্টিংটিতে জ্বলন্ত সূর্যের সামনে সাত ঘোড়া রয়েছে যেখানে সূর্যের রশ্মি শক্তি এবং ক্ষমতায়নের প্রতীক ঘোড়ার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।”

এই সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে ইতালির মিলানে উদ্বোধন হল তাঁর এক প্রদর্শনী। মিলান থেকে এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, “মঙ্গলবার যে প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে তাতে আমার বিভিন্ন মাপের পাঁচটি ছবি আছে। আমার মূল পছন্দের, তেলরঙে আঁকা। বিষয় প্রকৃতি এবং মাঝির জীবন। ইতালির অপর দুই প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর ছবিও প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। এটি চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত।“

স্বাতীর জন্ম টাটা জামশেদপুরে। সেখানে তাঁর মামার বাড়ি। বাবা পার্থ সারথি রায় চৌধুরী ছিলেন ডিফেন্সে। তাঁর সঙ্গে থাকার সুবাদে কানপুরে বড় হন স্বাতী। তাঁর কথায়, “কলকাতায় দাদুর বাড়ি ছুটির দিনে বেড়াতে যেতাম। বিয়ের পর আমি শিফট হয়ে যাই।“ কিভাবে শিল্পচেতনার উন্মেষ হল? প্রশ্নের উত্তরে স্বাতী বলেন, “বিজ্ঞানে স্নাতক, ছোটবেলা থেকেই চারুকলার প্রতি একটা অনুরাগ ছিল। সেই সময় শখ হিসেবে এটা করতাম। এর প্রতি অনুরাগ এবং ভালোবাসা থাকায় আবার শুরু করেছি বছর নয় আগে। তারপর থেকে এটিকে আমার পেশা হিসাবে নিয়েছি৷ আমার চারুকলায় একটি ডিপ্লোমা আছে, কলকাতায় প্রাইভেট টিউটর ছিল। স্পেন, ইতালি, সিঙ্গাপুরে বেশ কিছু শিল্প কর্মশালা করেছি৷”

স্বাতীর চিত্রকর্মগুলি প্রকৃতির সাথেও মানুষের সম্পর্ক স্থাপন করে। তাঁর সমুদ্রের দৃশ্য এবং ল্যান্ডস্কেপ পেন্টিং তাদের রঙ, বুনুনি এবং শৈলীর খুব জাঁকজমক এবং বৈসাদৃশ্য ব্যাপকভাবে ভিন্ন অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। স্বাতী শিল্পে বিশ্বাসী, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সীমানা মুক্ত। ভারত, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ভ্যাটিকান চ্যান্সেলারি প্যালেস, নিউ ইয়র্ক এবং মালদ্বীপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য গ্যালারি এবং জাদুঘরে স্বাতীর কাজ প্রদর্শিত হয়েছে। কর্মসূত্রে স্বামীর প্রসেনজিৎ ঘোষ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে যান। সেই সুবাদে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন স্বাতী। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও শিল্পকলার সাক্ষী হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *