Borjora, Carnival, প্রাচীন রীতি অনুযায়ী দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বড়জোড়ায়

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৫অক্টোবর: ইউনেস্কো থেকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়ার পর দুর্গোৎসবে যুক্ত হয়েছে বিসর্জনের কার্নিভাল। কলকাতার রেড রোড সহ রাজ্যের শহরাঞ্চলে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের কার্নিভাল বা প্রমোদোৎসবের শোভাযাত্রার আয়োজন হচ্ছে। রেড রোডে এই কার্নিভাল দেখতে দেশ বিদেশের বহু মানুষ আমন্ত্রিত হন। কিন্তু বাঁকুড়া জেলার দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের কার্নিভাল বহু প্রাচীন। সময়ের প্রমাণাদি না মিললেও আনুমানিক দু’শো বছরের অধিককাল থেকেই বড়জোড়ার সমস্ত সাবেকি তথা বনেদী বাড়ির পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন হয় এক সঙ্গে শোভাযাত্রা ও আতশবাজি প্রদর্শনের মাধ্যমে। গোটা উত্তর বাঁকুড়ার মানুষ এমনকি জেলার অন্য অংশের প্রতিমার একাংশ নিরঞ্জনের কার্নিভাল তথা শোভাযাত্রা দেখতে হাজির হন বড়জোড়া বিজয়া ময়দানে।

এই কার্নিভালে গত কয়েক দশক ধরে অংশ নিচ্ছে সর্বজনীন পুজো কমিটিগুলিও। ফলে বিজয়া ময়দানে যখন সমস্ত প্রতিমা এসে জড়ো হয় এবং মহিলারা মাকে বিদায় জানাতে শেষ আচার অনুষ্ঠানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তখন সেই মনোরম দৃশ্য কলকাতার আধুনিকতার কার্নিভালকেও হার মানিয়ে দেয়। প্রতিবছর বিজয়া দশমীর দিনই বড়জোড়ার সব পুজো বিসর্জন হয়। এবছর রবিবার পড়ায় তা হয়নি। ফলে সোমবার বিসর্জন করতে হয়। যদিও এদিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা কার্নিভাল থাকায় প্রথমে পুলিশ প্রশাসন রবিবারই বিসর্জনের জন্য চাপ দিলেও শাস্ত্র মতে বাঙালির কাছে দুর্গা মানে বাড়ির মেয়ে। তাই রবিবার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে নেই বলে শাস্ত্রীয় বিধি রয়েছে। সেই কারণে বনেদী বাড়ির পুজো কর্তারা সোমবার বিসর্জনের অনুরোধ জানাতে পুলিশ সোমবারই অনুমতি দেয় এবং বিজয়া ময়দানে প্রচুর পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করে। এই কার্নিভালের পুরো তদারকির দায়িত্ব থাকে বড়জোড়া গ্রাম ষোলোআনা কমিটির।

কমিটির সম্পাদক প্রণব মন্ডল বলেন, বহু বছর ধরে এই প্রথা মেনে বিসর্জন হয়। তিনি বলেন, বড়জোড়ায় আগে ১৮টি পুজো হতো। গ্রামের সব সম্প্রদায়ের বাড়িতেই পুজো হয়। সেন বাড়ির এলোকেশি দুর্গার দোলা আসে সেন পুকুর থেকে। বাকি ১৭টি সাবেকি ও ১৫টি বারোয়ারি পুজোর দোলা একসাথে শোভাযাত্রা সহকারে আসে শীতল পুকুর থেকে। তবে ৩২টি প্রতিমাই বিজয়া ময়দানে আসে, তারপর রাজারবাঁধে একে বিসর্জন হয়।

আগে আতস বাজির প্রদর্শনী হলেও গত দু’বছর আতশবাজি প্রদর্শনী বন্ধ রাখা হয়েছে বিজয়া ময়দানের পাশেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোগীদের কথা চিন্তা করে। এবার আতশবাজি প্রদর্শন হয়নি বলে দর্শককদের অনেকেই হতাশ। প্রচুর মানুষের সমাগম হয় বলে বিজয়া ময়দানে প্রচুর দোকানপাট বসে। এই এক রাতেই কয়েক লক্ষ টাকার বেচাকেনা হয় বলে জানান বিধায়ক অলক মুখার্জি। তিনি বলেন, দুর্গোৎসবে এখানে কোনও রাজনীতি থাকে না। সিপিআইএম বাড়ির দুর্গা যেমন আসে তেমনি বিজেপি বা তৃণমূল বাড়ির দুর্গাও আসে বিজয়া ময়দানে। তারপর কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টিমুখ সবই হয় ভেদাভেদ ভুলে। এদিকে বাঁকুড়া শহরের সতীঘাটেও এদিন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *