অভিষেকের ঘোষণাই সার, বাঁকুড়ায় পঞ্চায়েত দখল করতে সেই বিক্ষুব্ধদেরই দলে ফেরালো তৃণমূল

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৩০ জুলাই: ঘোষণাই সার। দলে স্থান নেই বিক্ষুব্ধদের একথা বললেও পঞ্চায়েত দখল করতে সেই বিক্ষুব্ধদেরই দলে ফেরালো তৃণমূল। দুই বিক্ষুব্ধকে দলে টেনে ত্রিশঙ্কু দুটি পঞ্চায়েত পেল তৃণমূল। এই ঘটনায় সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ায় নির্বাচনী প্রচারে এসে দলের বিক্ষুব্ধদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, টিকিট না পেয়ে নির্দল বা অন্য দলের টিকেটে দাঁড়ালে দলের দরজা তাদের জন্য চিরত‍রে বন্ধ। প্রয়োজন হলে তৃণমূল পঞ্চায়েতে বিরোধী হয়ে থাকবে তবুও নির্দলদের দলে স্থান হবে না।অভিষেক এই হুঙ্কার দিলেও দলের প্রভাবশালী কর্মীরা তা পাত্তাই দেয়নি। শুধু তাই নয়, দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জিতে গেছেন। এমন কি বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে তারাই নির্নায়কের ভূমিকায়।কাজেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে যিনি ছিলেন গদ্দার, নির্বাচনে জিতে দলে যোগ দিতেই তিনি হয়ে গেলেন উন্নয়নের সাথী। এই ঘটনার স্বাক্ষী এ রাজ্যের বহু পঞ্চায়েত। এ রকমই দু’জন শাসক দলের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়ে যোগ দিলেন তৃণমূলে। ফলে বাঁকুড়ার আরও ২টি ত্রিশঙ্কু গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিল তৃণমূল।

বাঁকুড়ার ১ নং ব্লকের কেঞ্জাকুঁড়া ও আন্দারথোল গ্রাম পঞ্চায়েত দুটি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। এই দুটি পঞ্চায়েত দখল করতে অবশেষে সেই বিক্ষুব্ধদের শরণ নিতে হলো দলকে। জেলার ১৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র ১০ টি পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি এবং ১৮ টিতে হয়েছে ত্রিশঙ্কু। বাকি ১৬২ টি রয়েছে তৃণমূলের দখলেই।বিক্ষুব্ধদের সহায়তায় ত্রিশঙ্কু এই ২টি পঞ্চায়েত দখলে আসায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে আর কোনো বাধা রইলো না। কিন্তু নির্বাচনী সফরে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, যারা দলে টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে ভোটে লড়বেন দলে তাদের দরজা চিরতরে বন্ধ। তাহলে কেন সেই নির্দলদের দলে নেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে বিরোধীরা যেমন তৃণমূলের নীতি আদর্শ নিয়ে কটাক্ষ করছেন তেমনি দলের ভিতরেই চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে এতে দলের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। গোষ্ঠী কোন্দল আরও বাড়বে। ২০ আসনের কেঞ্জাকুঁড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ১০টি, বিজেপি ৭টি, নির্দল ৩ ও কংগ্রেস ১টি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেসের প্রতীকে জেতা বিক্ষুব্ধ তৃণমূলী সন্টু চন্দ তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সংখ্যায় গরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল। অপর দিকে ২০ আসনের আন্দারথোল পঞ্চায়েতেও তৃণমূল ১০টি, বিজেপি ৬ ও সিপিআইএম ও নির্দল ২ টি করে আসন পায়। এখানে টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দেয় মনসুর হবিবুল্লা খান। বাঁকুড়া তৃণমূল ভবনে জয়ী নির্দল প্রার্থী মনসুর হবিবুল্লা খান ও কংগ্রেসের সন্টু চন্দকে দলের পতাকা ধরিয়ে টেনে নিলেন তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র। মনসুর সাহেব স্বীকার করেন দলের টিকিট না পেয়েই তিনি নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফের নিজের ঘরে ফিরে ভালো লাগছে। সন্টু চন্দও টিকিট না পেয়ে কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করে জয়ী হন। কিন্তু দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, তৃণমূলের উন্নয়ন দেখে অন্য দল থেকে কেউ এলে স্বাগত। দুজনেই আগে আমাদের দল করতেন না।

তৃণমূল যে এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন সেই দাবি তুলে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন মুখার্জি বলেন, ওদের নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই। কেউ কাউকে মানে না। নির্বাচনের আগে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক সমীর চক্রবর্তী ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নির্দলদের বহিষ্কার করে সব দরজা জানালা বন্ধ করে গিয়েছিলেন। স্বপন মুখার্জির কটাক্ষ সেটাকি নাটক ছিল। অপরদিকে দলেরই একাংশের মতে এতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। আগামীদিনে কেউ দলের হুইপ মানবে না। এটা বুমেরাং হবে বলে তাদের ধারণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *