Harmony, wedding, বিয়ে বাড়িতেও সম্প্রীতির বার্তা

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ৫ মে : বিয়ে বাড়িতেও সম্প্রীতির বার্তা। মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে এমনই মানসিকতার বীজ বপনের চেষ্টা করলেন এক ফুটপাত ব্যবসায়ী। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। এই অভিনব দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছেন অতিথিরা।

রামপুরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচমাথার ফুটপাতে জুতো বিক্রি করেন শাহাজাদা হোসেন ওরফে কিনু। আজীবন কংগ্রেস কর্মী হিসাবেই থেকে গেলেন তিনি। হাজারো অনটনের মধ্যেও তিনি শাসক দলের কাছে মাথা নোয়াননি। তাঁর কথায় জুতো বিক্রি করি, মাথা বিক্রি করি নাই। এছাড়াও নির্বাচনের আগে কংগ্রেস- সিপিএমের জোটের অভিনব দেওয়াল লিখন করে রাজ্যস্তরে আলোচিত হয়েছিলেন। রামনবমীর আগে শহরে রাম ভক্তদের শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া পোস্টের ঝুলিয়ে নিজের সম্প্রদায়ের একাংশের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। তবুও সম্প্রীতির রাস্তায় তাঁর পথচলা কেউ রুখতে পারিনি। রামপুরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এই সম্প্রীতির নজির সৃষ্টিকারী কিন্তু সব সময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে চলেছেন। গত পুরসভা নির্বাচনে নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে সামান্য ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। তবুও মানুষের আপদে বিপদে পাশে থাকতে ভোলেননি। খবর পেলেই দোকান বন্ধ করে ছুটে পৌঁছে গিয়েছেন অসহায় মানুষদের পাশে। রেলের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে রেলকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছিলেন। তাঁর কথায়, “হেরে গিয়েছি, কিন্তু হারিয়ে যাইনি।” এমনই দেওয়াল লিখন করে ওয়ার্ডবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। এবার নিজের মেয়ের বিয়েতে কাটাউটের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে রাজ্য এবং দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক দেশ ও এক মানসিকতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে তিনি জানান।

কাটাউটে তুলে ধরা হয়েছে হিন্দু-মুসলিম, পাঞ্জাবি, মারাঠি, শিক একাত্মার সম্পর্ক। কিনু বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা গদির লোভে হিন্দু মুসলিমের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছেন। তাদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ মানুষকে খুন করেছে। কিন্তু আদতে আমরা মানুষ। এটা ভুলে যাচ্ছি। সেটা না হলে ধূলিয়ানে বাবা- ছেলে খুন হতেন না। কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে ওভাবে জাতি দেখে গুলি করে হত্যা করা হত না। এইসব ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে হিন্দু- মুসলিম এক অপরকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। সেই বিভাজন কাটাতেই আমার এই ছোট্ট প্রয়াস।

একজন ফুটপাত ব্যবসায়ীর এহেন ভাবনার তারিফ করেছেন রামপুরহাট পুরসভার কাউন্সিলর তৃণমূলের সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, তৃণমূল নেতা তুহিন শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, “কিনুর এই ভাবনা তো কিছুটা হলেও সমাজে দাগ কাটবে। বিয়ে মানে শুধুই কবজি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া নয়, এই সমাবেশে মানুষের মধ্যে কিছু বার্তা দেওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছে কিনু। আমরা নব দম্পতিকে আশীর্বাদ করি তারাও যেন বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যায়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *