“একগুচ্ছ কাপুরুষ“, সংবাদপত্রকে ডাঃ কুণাল সরকারের তোপে প্রতিক্রিয়া

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২৫ নভেম্বর:
সংবাদপত্রকে সম্প্রতি একহাত নিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক, মেডিকা গ্রুপের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তথা ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কলের প্রেসিডেন্ট কুণাল সরকার। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর এই মন্তব্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

২০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকার শুরু হয় সরকারি নানা হাসপাতালে নেতা-মন্ত্রীদের জামাই আদর ও আমজনতার অবহেলার কারণের প্রশ্ন নিয়ে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতেই এগোয় প্রাসঙ্গিক নানা কথা। কুণালবাবু বলেন, “বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদদের থেকেও ক্ষতিকারক নিউজপেপার ও মিডিয়া।“

‘রায় বাহাদুর’ নামে একটি পোর্টালের ইউটিউবে কুণালবাবু সাক্ষাৎকার নিতে আসা সাংবাদিককে বলেছেন, “আজ প্রিন্ট মিডিয়ার ফার্স্ট পেজে সেভেন্টি পার্সেন্ট ডাহা মিথ্যে কথা লেখে। আজকের নিউজপেপারের ফ্রন্ট পেজটা কেমন হয়েছে জান? ওই হিন্দি ফিল্মের স্বল্পবসনা আইটেম নম্বরের হিরোইনদের মত হয়েছে। কোথায় লোক মারা গেছে, ক্ষুধায় মৃত্যু হয়েছে, একটা বিপর্যয় হয়েছে কারও চিন্তা নেই।

প্রথম পৃষ্ঠার জ্যাকেটে বিজ্ঞাপন দেব। তার মধ্যে ওই যে কর্মহীন ক্রিকেট ক্যাপ্টেনগুলি থাকে, তারা তো কোনও পন্য বাদ রাখেনি, জুতোপালিশ থেকে দাঁতের মাজন— সব কিছুর বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে। আমি খালি দেখছি কোনও ভদ্রলোক অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপন দেন কিনা। দি ফার্স্ট বিট্রে লাইজ অ্যাট দি ডোর অফ আ মিডিয়া। ইউ আর এ বাঞ্চ অফ কাওয়ার্ডস। কী শেখায় আজ মাসকমে? কী শেখায় আজ জার্নালিজমে? নিজেদের ঘর প্রথমে পরিস্কার কর। তারপর সেই মেরুদণ্ড নিয়ে সমাজের কাছে দাঁড়াবে। আজ ওভারঅল জার্নালিস্টিক কমিউনিটি ওয়েস্ট বেঙ্গলের…“

শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার হয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৬০০, ৩৭৪ ও ১ হাজার ৭০০। সমর্থন ও বিরোধিতা— দুইই আছে প্রতিক্রিয়ায়। পাঁচটি নামী সংবাদপত্রের প্রাক্তন আধিকারিক তথা বার্তা নিউজ নেটওয়ার্কের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, পার্থ চ্যাটার্জী লিখেছেন, “উফফ আপনার কি জ্ঞান, দয়া করে মেডিকা হাসপাতাল ফ্রি বেড ঘোষণা করুন, আর নিজের ফীস ১ টাকা করুন, বুঝব আপনার হিম্মত।। আপনি মিডিয়া, ফিল্ম এক্ট্রেস, অন্তর্বাস হোসিয়ারি ইন্ডাস্ট্রি, বৃদ্ধ ক্রিকেটার, রাজনৈতিক দল সমাজের সকলকে গালাগাল দিলেন, আর একমাত্র ভালো ধোয়া তুলিসীপাতা আপনি। আর সমগ্র বেসরকারি হাসপাতাল ডাক্তারকুল, যাঁরা সমাজে উপরের প্রত্যেকটি প্রফেশনের মানুষের উপর নির্ভর করে জীবিকা করছেন চিকিৎসা করছেন, মোটা টাকা রোজগার করছেন ১০০০ গুন বেশি সরকারী ডাক্তারদের থেকে। কারন আপনাদের এফোর্ট করার ক্ষমতা গরিবদের নেই। ধন্যবাদ জানাবো সরকারি হাসপাতাল এবং সরকারি ডাক্তারদের, তাঁদের জন্যেই গরিব, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা বেঁচে আছে। মেডিকেল কর্পোরেট ভারতের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা।“

সৌমেন দত্ত লিখেছেন, “ডাক্তার সরকার, করোনার সময় এই মিডিয়া হাউসের সাহায্য নিয়ে আপনিও আমাদের ভয় দেখিয়ে ছিলেন। শুধুমাত্র ভয় দেখিয়ে হাসপাতাল ভরিয়ে ছিলেন, বিলের নামে লুঠপাট চালিয়েছিলেন।“ তথাগত রায় লিখেছেন, “স্যার আপনি তো বড় বড় কথা বলছেন। আপনি নিজেও তো কর্পোরেট মানুষ। টাকা ছাড়া আপনি কিছু বোঝেন“?

সুব্রত চ্যাটার্জী লিখেছেন, “২০০ টাকার ওষুধ ২০০০ টাকাতে বিক্রি হয়। স্যার কিছু বলুন! পেপার না পড়লে কিছু যায় আসে না।“ সুবীর মুখার্জী লিখেছেন, “শুধু বাতেলা। আজ পর্যন্ত কত জন গরীব মানুষের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছেন একটু বলবেন।”

দেবাশি দত্ত লিখেছেন, “ডাক্তারবাবু আজকাল নিউজপেপার খুব কম সংখ্যক মানুষ পড়েন। কিন্তু, মেডিক্যাল প্রফেশন নিয়ে আপনার থেকে কিছু শুনতে চাই। পেপার না পড়লে সেভাবে কিছু যায় আসে না। কিন্তু ডাক্তারী ব্যবসা মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে আর মানুষও ফিরছে না। সাহস করে আত্ম-সমালোচনা করুন, অনেক পরিবার ও জীবন বেঁচে যাবে।”

সোনালি পালমণ্ডল লিখেছেন, “আপনার বক্তব্যগুলো তো মিডিয়াতেই বলছেন…তাহলে! যার যেটা পছন্দ সে সেটা দেখবে, যার পছন্দ নয় সে সেটা উপেক্ষা করবে। যে যে পেশায় আছেন সেটা মনোযোগ দিয়ে করাই ভাল। কারণ আজকাল সব কিছুতেই টাকা লাগে। কিছুই বিনে পয়সায় মানুষ পায় না। এমনকি চিকিৎসা পরিষেবাশুধুমাত্র অর্থের উপরেই নির্ভর। তাই খুব সাধারণ মানুষকে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাতে হয়।”

প্রদীপ গাঙ্গুলি লিখেছেন, “আগে নিজের ঘরে দেখুন , কতো মানুষ সর্বহারা হয়েছে প্রাইভেট হসপিটাল গুলোর জন্য, আপনারা তো মৃত মানুষকেও ছাড়েন না।“ অনিমেষ গোস্বামী লিখেছেন, “ওনাকে কেউ বিজ্ঞাপনে ডাকছে না বলে রাগ। নাহলে এইসব কথা বলতে ওনার নিজের লজ্জা লাগত।” দীপঙ্কর সানি পাল লিখেছেন, “জ্ঞান না দিয়ে নিজে আগে বলুন মেডিকার রোগী ঝাড়া টাকা থেকে কত % নিজে পান ম্যানেজমেন্ট থেকে? নিজেও তো ডাক্তার কাম ব্যবসাদার।”

ইন্দ্রনীল দাস লিখেছেন, “যাকে রিটায়ার্ড ক্যাপ্টেন, কোনও কাজ নেই বলছেন, ওঁদের ব্র্যান্ড ভ্যালু এতটাই হাই যে এখনও কোম্পানিগুলো ওঁদের দিয়ে নিজেদের বিক্রি বাড়াতে বিজ্ঞাপন করায়। আর ওঁরা
বিজ্ঞাপন করে আয় করছেন। অন্তত চুরি তো করছেন না।“

তনুকা দাস লিখেছেন, “ওঁরা (চিকিৎসক) তো মরা মানুষকে ভেন্টিলেশনে রেখে পয়সা খায়। এদের মুখে এসব মানায় না।“ দেবেন্দ্র রাণা লিখেছেন, “আপনাদের ক’জন বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছেন? প্রথমে আপনারা দেশের জন্য কিছু করার জন্য নিজেদের শুদ্ধ করুন!“ অর্ণব মজুমদার লিখেছেন, “সে যা হয় হোক, আপনার ভেতরে যে চিকিৎসক নামে এক ধান্দাবাজ সারাদিন মানুষের রক্তপান করে চলেছে তার ছবিটা না দিলেই হলো।“

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী লিখেছেন, “সত্যি কথা লেখায় এ দেশে বিপদ আছে। একইভাবে কোনও ডাক্তারবাবুর পক্ষে কর্পোরেট হাসপাতালের অন‍্যায়ভাবে রোগীর পরিবারের গলা কাটার ব‍্যাপারে কিছু বলতে পারেন? মৃত রোগী ভেন্টিলেটর এ রেখে পয়সা কামানোর বিরোধ করেন? দামী ওষুধ হাসপাতালের দোকানে দিয়ে কমিশন খাওয়ার বিরুদ্ধে বলেন? সবাই নিজেকে বাঁচাচ্ছে ক্ষমতাশালীদের কাছ থেকে।“

সমর্থনও করেছেন অনেকে। সংস্কৃত শিক্ষক বাপী মোদক লিখেছেন, “সুন্দর বলেছেন এই জন্য আজ মানুষ খবরের কাগজ দেখে না।” বর্ধমানের কমলা পাঁজা লিখেছেন, “এই জন্যই তো অন্যতম শক্তিশালী গণমাধ্যম সংবাদপত্রের দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করে না।” নীহার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “একদম সত্য কথা যে কথাটা অনেকেই বলতে ভয় পায়।“

শ্যামাদাস গাঙ্গুলি লিখেছেন, “দাদা একদম সত্য কথা বলেছেন। অনেকেই কাগজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছে।” মিঠু পাল লিখেছেন, “আপনাকে হাজার কুর্নিশ জানাই। আপনিই একমাত্র মানুষ যিনি একজন সুস্থ শুভ চেতনা সম্পন্ন নাগরিকের মতো সত্যি কথা বলার সাহস দেখালেন। স্যার আপনার মতো মানুষ আছেন বলেই,আমরা পরিচ্ছন্ন সমাজের আশা রাখি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *