৪৫০ বছরের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজোয় এবারও মাতল দেখুড়িয়া

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ২২ নভেম্বর: নিজেদের জমি সম্পত্তি ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে এবং গ্রামে সমৃদ্ধি ফেরাতে দেবতার শরণাপন্ন হয়েছিলেন গ্রামের রায় পরিবার। শুরু করেছিলেন জগদ্ধাত্রী পুজো। পুজো শুরুর পর গ্রামে ফিরেছে শান্তি ও সমৃদ্ধি। ফলে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে এবারও জগদ্ধাত্রী পুজোয় মাতল বীরভূমের রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা।

পুজো শুরুর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলতে না পারলেও, গ্রামবাসীদের দাবি, প্রায় ৪৫০ বছর আগে গ্রামের রায় পরিবার ইষ্টদেবতা হিসাবে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। মায়ের নিত্যপুজোর জন্য গ্রামে নিয়ে আসা হয়েছিল ভট্টাচার্য পরিবারকে। তাদের দৌহিত্ররা আজও বংশের পুজো চালিয়ে আসছেন।

পুজোর প্রধান পুরোহিত রতন ভট্টাচার্য বলেন, “দেখুড়িয়া গ্রামে একসময় তেজচন্দ্র রায়, সতীশ রায়দের পূর্বপুরুষেরা দেখুড়িয়া গ্রামে জমিদারি শুরু করেছিলেন। গ্রামে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফেরাতে তারাই জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেছিলেন। সেসময় পুজো পাঠ করার জন্য সত্যঞ্জীব ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে গ্রামে নিয়ে আসেন জমিদাররা। শুরু হয় গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো। মা জগদ্ধাত্রীকে ইষ্ট দেবতা হিসাবে পুজো করেন গ্রামবাসীরা। তার পরেই গ্রামে শুরু হয় কালী পুজো। মা কালীকে গ্রাম্যদেবী রূপে পুজো করেন গ্রামবাসীরা। পুজোর জন্য জমি দান করে গিয়েছিলেন পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু কালক্রমে সেই জমি বেশ কিছু অংশ বেহাত হয়ে গিয়েছে। তাই এখন পুজো হয় সবার সাহায্যে”।

বর্তমানে পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দীপ ভট্টাচার্যরা বলেন, “প্রাচীন রীতি মেনে এখানে শুধুমাত্র নবমীর দিন পুজো করা হয়। ওইদিনই সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী পুজো করা হয়। যেহেতু দ্বারকা নদী উত্তরদিকে ব্যয়ে চলেছে। সেহেতু দ্বারকা নদীর জল গঙ্গার সমান বলে বিশ্বাস মানুষের। তাই সোমবার ভোরের দিকে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কাঁসর, ঘণ্টা, ঢাক ঢোল নিয়ে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকা নদী থেকে সুসজ্জিত ভাবে ঘট ভরে আনা হয়। এবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ঘট ভরা হবে। তারপরই তন্ত্রমতে চলে পুজো। চারটি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। তার মধ্যে প্রথম একটি গ্রাম্য দেবী মা কালীর নামে বলিদান দেওয়া হয়। তিনটি বলিদান দেওয়া হয় ইষ্টদেবতার নামে। অন্যানবার সন্ধ্যায় হাজার পাঁচেক মানুষের মধ্যে পুজোর ভোগ বিতরন করা হত। কিন্তু করোনার কারনে এবার দিনের বেলা ভোগ বিতরণ করা হবে। তবে লোকসংখ্যা কম হবে।

দশমীর সন্ধ্যায় মাকে গ্রাম প্রদক্ষীণ করে নিরঞ্জন দেওয়া হবে বড় পুকুরে”। এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন পার্শ্ববর্তী উদয়পুর, বলরামপুর, কাঁদা, কামাখ্যা, সাতঘড়িয়া সহ আট – দশটি গ্রামের মানুষ। তারাপীঠের সেবাইত থেকে রামপুরহাট শহরের মানুষও পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। এবার ডাকের সাজের প্রতিমা তৈরি করছেন রামপুরহাটের অঙ্কন শর্মা। কথিত আছে গ্রামের ইষ্ট দেবীর কাছে কেউ মানত করলে তার মনস্কামনা পূরণ হয়। ফলে তারাও মায়ের কাছে মানসিক করে পুজোর খরচে ভাগ নেন। এই উপলক্ষে গ্রামে আগে মেলা বসলেও করোনার কারনে এবার তা বাতিল করা হয়েছে। কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যরা জগদ্ধাত্রী পুজোয় বাড়ি ফেরেন। পুজোয় তাদের অংশগ্রহণে গ্রামে মিলন উৎসবের চেহারা নেয়। অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এবারের বিশেষ আকর্ষণ মানব পুতুল। করোনাসুরকে বধ করবে মানব পুতুল। তবে সব কিছু হবে দুরত্ব বিধি মেনেই”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *