আমাদের ভারত, শ্রীরূপা চক্রবর্তী,১২ ফেব্রুয়ারি:
২০২৪:মোদী ভার্সেস কেজরিওয়াল। হ্যাঁ জয় নিশ্চিত হতেই এই পোস্টার পড়েছে আম আদমি পার্টির অফিসের সামনে। আবেগ তাড়িত হয়ে কেজরিওয়ালের দলের কর্মীরা এই কাজটা করে ফেলেছে বলে অনেকেই বলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এটা একেবারে উপেক্ষা করার মত বিষয় নয়। কারণ মোদীর বিপক্ষে দেখতে গেলে তেমন কোন মুখ এখনো নেই। দিনে দিনে কংগ্রেস কার্যত তৃতীয় দলে পরিণত হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীকে মোদীর বিপক্ষে রাখতে চান না বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাই। সেখানে বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে আসার লড়াইয়ে সামিল। তবে দিল্লির এই অসামান্য ফলাফলের পর মোদীর প্রতিপক্ষ মুখ হিসেবে অনতম দাবিদার যে এই মুহূর্তে কেজরিওয়াল তা অনেকেই মনে করছেন।
লোকসভায় কংগ্রেস খড়কুটোর মতো উড়ে তো গিয়েইছিল। এমনকি যেসব রাজ্যে বিজেপি কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে বিধানসভায় ত্রিমুখী লড়াই হয়েছে সেখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি কংগ্রেস। কংগ্রেস আজ তৃতীয় দলে পরিণত হয়েছে। আর দিল্লিতে তো কিছু বলার নেই। ৬৭টি সিটে জমানত জব্দ হয়েছে। সেখানে বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন কেজরিওয়াল।
এতদিন বিজেপির বিরুদ্ধে অন্যতম মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উঠে আসতে দেখা গিয়েছে। লোকসভাতেও তিনি বিরোধী ঐক্য গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তার জন্য অবশ্য তাকেই দায়ী করেন বিরোধীদের একাংশ । তবে বার বার বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখা গেছে। যদিও অখিলেশ, মায়াবতী, শরদ পাওয়ারের অনেকেই একমত ছিলেন না এব্যপারে।
কিন্তু দিল্লির নির্বাচনের এই বিপুল জয় কেজরিওয়ালকে মোদীর বিরোধী মুখ তৈরি হতে সাহায্য করেছে। এমনিতেও উন্নয়ন ছাড়া যে রণকৌশলে কেজরিওয়াল বাজিমাত করেছেন তার অন্যতম হল সমস্ত অ-বিজেপি ভোটকে নিজের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। প্রচারে গিয়ে তিনি বলেছেন, “ওরা আমাকে সন্ত্রাসী বলেছে, যদি সে কথা বিশ্বাস করেন তাহলে বিজেপিকে ভোট দিন আর যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে যে দলেরই সমর্থক হন না কেন ভোটটা আমায় দিন।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই প্রচার যথেষ্ট কাজ দিয়েছে। কারণ সমস্ত অ-বিজেপি ভোট একত্রিকরণ হলে তবেই বিজেপিকে হারানো সম্ভব। আর সেই কাজটাই দক্ষতার সঙ্গে করে দেখিয়েছেন কেজরিওয়াল। অর্থাৎ খোদ রাজধানীর বুকে অবিজেপি মুখ হিসেবে বিপুল জন সমর্থন নিয়ে উঠে এসেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
ফলে বিজেপি বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে মোদীর প্রতিপক্ষ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বদলে যে নামটা উঠে এসেছে তা অবশ্যই কেজরিওয়াল।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি ২০২৪- বিরোধীদের মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় কেজরিওয়াল হবেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন ২০২১-এ রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফলাফলে সেটা স্পষ্ট হবে।
কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থাকছে, তৃণমূল যদি আবার ক্ষমতায় ফেরে সেক্ষেত্রে কী হবে? তাহলে কি বিরোধীদের মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেজরিওয়াল সমুখ সমরে নামতে চলেছেন আগামীতে। আর তা যদি হয় তাহলে আবার লাভের গুড় পিঁপড়ে খাওয়ার মত বিজেপির সুবিধা করে দেওয়াই হবে। কারণ বিরোধীরা আবার একাধিক শিবিরে ভাগ হবে। ফলে ভাগ হবে তাদের ভোট। আর তাতে সবথেকে বেশি লাভবান হবে সেই বিজেপিই।