আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ১৭ নভেম্বর: সরকারী হাসপাতালে লাটে চিকিৎসা পরিষেবা। চলছে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের রেষারেষি। চিকিৎসকদের রেফারের প্রতিযোগিতায় অসহায় প্রসুতি মহিলারা। বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত চার মাসে বালুরঘাট সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ২০২ জন রোগীকে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যে যাদের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন মহিলা চিকিৎসক সঙ্গীতা দাস। যিনি গত চারমাসে রেফার করেছেন ৭১ জন রোগীকে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সরকারী হাসপাতালের অপর এক মহিলা চিকিৎসক দীপান্বিতা ভট্টাচার্য। তিনিও চারমাসে ৩৯ জন রোগীকে রেফার করেছেন। এরপরের তালিকায় রয়েছে প্রশান্ত সরকার। যিনি করেছেন ৩২ জনকে রেফার। মৃন্ময়ী দত্ত করেছেন ২৮ জনকে রেফার। পায়েল মন্ডল করেছেন ১৩ জনকে, শিশির শেখর মৃধা ১৭ জনকে, রঞ্জন কুমার মুস্তাফীও করেছেন ২ জনকে রেফার।
বিগত চারমাসে সরকারী হাসপাতালে রেফারের এই পরি সংখ্যান সামনে আসতেই প্রকাশ্যে এসেছে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এক কঙ্কালসার চিত্র। যাকে ঘিরে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে ৭ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অভিযোগ, তাদের একাংশ নার্সিং হোমের সাথে যুক্ত থেকে একপ্রকার অবসর সময়েই চালিয়ে চলেছেন সরকারী হাসপাতালের পরিষেবা। অনেকে আবার নিজের নার্সিং হোম খুলেও চালাচ্ছেন রমরমা কারবার। আর যার জেরে প্রসূতি বিভাগের একাংশ চিকিৎসকরা হাসপাতালে ডিউটি না করেই নার্সিং হোম ও প্রাইভেট প্র্যাক্টিসেই মত্ত হয়ে রয়েছেন। আর যার জেরে সরকারী হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা একপ্রকার লাটে উঠবার জোগাড়। যা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে জোড়ালো প্রশ্ন।
জয় মন্ডল ও সনত সরকাররা বলেন, কিছু দিন আগে স্ত্রীকে বালুরঘাট হাসপাতালে প্রসব করাতে ভর্তি করেছিলাম। সারাদিন ওটিতে রেখে দেবার পরে মালদা মেডিকেলে রেফার লিখে দেন। মালদা নিয়ে যাবার পরে সাথে সাথে চিকিৎসকরা অপারেশন করে। প্রসূতিদের প্রসব করবার সময় সামান্য সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকরা কোনও ঝুঁকিই নিতে চাইছে না। শুধু তাই নয় চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে রেষারেষির কারণে মহিলারা প্রসব করাতে এসে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাইভেট ক্লিনিকে কোনও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসককে রোগীরা দেখানো পরে প্রসবের সময় অন্য চিকিৎসক সেই রোগীর দায়িত্ব নিতে চাইছে না। কোনও কারণ ছাড়া সেই রোগীকে মালদা মেডিকেলে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। কোনও প্রচেষ্টা ছাড়ায় প্রসূতিতে রেফার করে দিচ্ছে, যার কারণে যাতায়াত করতে গিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পরতে হচ্ছে প্রসূতিদের। হাসপাতালে এতো পরিকাঠামো থাকা সত্বেও চিকিৎসকদের একাংশ দিনের পর দিন কেন রেফার করছে তা নিয়ে নীরব রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার তপন বিশ্বাস জানিয়েছেন, রেফার বন্ধ করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছি। নির্দেশ দেওয়া আছে কোনও প্রসূতির প্রসবের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে মেডিকেল বোর্ড তৈরি করতে হবে। তার পরে সেই রোগীর চিকিৎসা করাতে হবে। এই নিয়ে চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করেছি। দুই দিন আগে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের চিঠি দিয়েও জানানো হয়েছে এতো রেফার কেন হচ্ছে। দ্রুত বন্ধ না হলে কড়া পদক্ষেপ করব।