সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৩ডিসেম্বর: আজ সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের ঘুটগোড়িয়ার একটি ইস্পাত কারখানায় কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হলো এক যুবকের।
বড়জোড়া থানার পুলিশ সুত্রে জানাগেছে, মৃতের নাম বিজয় ধীবর (১৯)। বাড়ি স্থানীয় সাহারজোড়া গ্রামে। বিজয়ের মৃত্যুর পরপরই কারখানার ভিতরে থাকা শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রমিক সুরক্ষায় উদাসীনতার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কারখানার বাইরেও শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। দুর্ঘটনার খবর শুনেই কারখানায় আসেন ঘুটগোড়িয়ার পঞ্চায়েত প্রধান ও শিল্প তালুকের শ্রমিক নেতা গণেশ মন্ডল। তিনি আসার পর শ্রমিকরা কিছুটা শান্ত হন। কিন্তু বিজেপি সমর্থিত শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং শাসক দলের নেতাদের মদত ও তোলাবাজির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ দেখাতেই থাকেন।
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত অগস্তি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বলেন, বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে অসংখ্য ছোট ও মাঝারি কল কারখানা রয়েছে। অধিকাংশ মালিক তৃণমূল নেতাদের মাসোহারা দিয়ে শ্রমিক সুরক্ষার দিকে নজর না দিয়ে মুনাফা কুড়োনোর দিকেই নজর রাখছে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে।
বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখার্জি সুজিত অগস্তির এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বলেন, ওনারা তোলাবাজির ধান্দায় রাজনীতি করে। তৃণমূল শ্রমিকদের পাশে থাকে। অলক মুখার্জি বলেন, ওনাদের তো খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু সংবাদ মাধ্যমে বুলি আওড়াতে দেখা যায়।
মৃত বিজয়ের প্রতিবেশী অজয় প্রামাণিক বলেন, অত্যন্ত গরিব পরিবারের বাবা- মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল বিজয়। সংসারের হাল ধরতে ১৮ বছর হতে না হতেই কাজে যোগ দেয়। ও কম্প্রেসার অপারেটার হিসেবে কাজ করতো। বিজয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তার বাবা দেবদাস ধীবর একমাত্র ছেলের শোকে কাতর। মা পাগলের মত গড়াগড়ি দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
তার এক সহকর্মী জানান, এদিন সাত সকালেই বাড়ি থেকে চা-বিস্কুট খেয়ে মর্নিং শিফটে কাজে যোগ দিয়ে কারখানার কম্প্রেসার মেশিনের বোতাম টিপতেই বেল্ট ছিঁড়ে সপাটে মুখমন্ডলে সজোরে আঘাত করে। ছিটকে পড়েন সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবক বিজয় ধীবর। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বড়জোড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই শ্রমিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বিধায়ক অলক মুখার্জি, পঞ্চায়েত প্রধান গণেশ মন্ডল ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। অলক মুখার্জি বলেন, এদিন বিজয়ের সৎকারের জন্য ৫০ হাজার টাকা ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে এককালীন ১০ লাখ টাকা ও বিজয়ের বাবাকে কারখানায় কাজ দেবেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।

