স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ২৮ জানুয়ারি:
নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ রেল প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য জমিজট কাটার আশার আলো দেখা গেল না মঙ্গলবারেও। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনাল ম্যানেজার এস পি সিং , রানাঘাট লোকসভার সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণনগর থেকে আমঘাটা, স্বরূপগঞ্জ পর্যন্ত গাড়িতে করে গিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন। শেষপর্যন্ত মহিশুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের যে জায়গায় রয়েছে মূলত জমিগত সমস্যা, সেখানেও যান।
সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘এই এলাকার মানুষের দাবি কী, তা আমি জানি। মানুষের দাবি যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গত। পুনর্বাসন দিলে তারা উন্নয়নের জন্য জমি ছেড়ে দিতে রাজি আছেন, তা আমি ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারকে জানিয়েছি। এখানকার মানুষের পুনর্বাসন অবশ্যই দেওয়া উচিত। সঙ্গে দেওয়া উচিত ক্ষতিপূরণও।’ যদিও শিয়ালদহ ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের বক্তব্য, ‘জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব। কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে চায়, কিন্তু কিছু লোক জমি দিতে রাজি নন। জমি পাওয়া হয়ে গেলে দু-তিন বছরের মধ্যেই কাজ হয়ে যাবে।’ যদিও মহিশুরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার যেসব মানুষদের জমির জন্য আটকে রয়েছে রেল প্রকল্পের কাজ, তারা পুনর্বাসন তো বটেই, রেলের কাছ থেকে জমির মূল্যের থেকে প্রায় চারগুণ বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
এদিন স্থানীয় বাসিন্দা নিমাই মন্ডল জানিয়েছেন, ‘আমার জমির দাম ১ লক্ষ হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ৫ লক্ষ। এইরকমভাবে ক্ষতিপূরণ না দিলে আমরা জমি ছাড়ব না। ওরা বলেছেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আমাদের দাবিমত ক্ষতিপূরণ দিলে তবেই আমরা জায়গা ছাড়ব।’ স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদমনি বিবির বক্তব্য, ‘আমার জমির দাম ২ লক্ষ টাকা হলে আমাকে ৪ লক্ষ দিতে হবে। এছাড়া তিনটে পাকা ঘর করে দিতে হবে। মূল্য বেশি না দিলে জমি ছাড়ব কেন?’
গ্রামবাসীদের এই অদম্য জেদের জন্যই আটকে রয়েছে রেল প্রকল্পের কাজ। জমি জটের কারণেই কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতার কাজ আমঘাটা পর্যন্ত হয়ে আটকে যায়। কাজ এগোচ্ছিল বেশ ভালোভাবেই। গঙ্গার উপর দিয়ে রেল ব্রিজের কাজ অনেকটাই হয়ে যায় । যদিও মহিশুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী তাদের জমি না ছাড়ায় আটকে যায় রেল ব্রিজের কাজ। ওই গ্রামবাসীদের বোঝানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক দলের লোকজন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত হয়নি কাজের কাজ কিছুই। গ্রামবাসীরা যে এখনও নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন, মঙ্গলবার ফের তা স্পষ্ট হয়ে যায়।