Sukanta, BJP, “বাংলার মেয়েদের সম্মানের জন্য হাজার বার আটক হতে রাজি” কসবা কান্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নামতেই সুকান্ত সহ বিজেপি নেতাদের ভ্যানে তুললো পুলিশ

আমাদের ভারত, ২৮ জুন: কসবার কান্ডের প্রতিবাদে সামিল হতেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আটক করলো পুলিশ। এই নিয়ে গত এক মাসে রাজ্যের একাধিক ইস্যুতে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনবার আটক হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। আজ আটক হবার পর প্রিজন ভ্যান থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলার মেয়েদের সম্মানের জন্য তিনি বার বার আটক হতে পারেন।

গড়িয়াহাটে বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে আজ ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপির মিছিল শুরু হবার আগেই আটক করা শুরু করে পুলিশ। বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেট ভাঙ্গতেই অ্যাকশনে নেমে পড়ে পুলিশ। একের পর এক বিজেপি নেতা কর্মীকে আটক করা হয়। বিজেপির বিক্ষোভ ঘিরে ধরপাকড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গড়িয়াহাট মোড়।

আর জি কর কান্ডের নারকীয় ঘটনা এখনো ভুলতে পারেনি গোটা রাজ্য। তার রেশ কাটতে না কাটতেই কসবা কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগ। দক্ষিণ কলকাতার ল’ কলেজের এই ঘটনায় গতকাল থেকেই প্রতিবাদ মিছিলে সরগরম শহর তিলোত্তমা। সেই ধারা অব্যাহত রেখে আজ গরিয়াহাট, কসবায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু প্রথম থেকেই তাদের আটকাতে তৎপর ছিল পুলিশ। প্রায় এক ঘন্টা ধরে গড়িয়াহাট মোড়ে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ওই প্রতিবাদ মিছিলে সুকান্ত মজুমদার আসতেই কিছুটা দূরে ব্যারিকেড তৈরি করে দেওয়া হয়। যদিও সেই ব্যারিকেট ভেঙ্গে ফেলতে চেষ্টা করে বিজেপি কর্মীরা। তাতেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। সেই সময় সুকান্ত মজুমদার, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়দের আটক করে পুলিশ। সুকান্ত মজুমদার প্রশ্ন করেন, “এখানে ১৪৪ ধারা নেই তাহলে আটকাচ্ছেন কেন? পাল্টায় পুলিশ জানায় মিছিলের অনুমতি নেই। এই ব্যারিকেট ভেঙ্গেছেন, তাই গ্রেফতার করবো। সুকান্ত মজুমদার তখন বলেন, গণতন্ত্রে অধিকার রয়েছে বিক্ষোভ দেখানোর। থানার সামনে গেলে গ্রেপ্তার করুন। রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণ হচ্ছে, তখন তো আটকাতে পারছেন না। আর আমরা বিক্ষোভ করলেই দোষ?”

মমতা ব্যানার্জি হায় হায়, বলে স্লোগান দিতে দিতে সুকান্ত মজুমদার প্রিজন ভ্যানে ওঠেন। তিনি বলেন, “পুলিশের আচরণ গণতন্ত্রের হত্যাকারীর আচরণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যকে কিং জনের উত্তর কোরিয়াতে পরিণত করেছে। প্রয়োজনে হাজার বার গ্রেপ্তার হতে রাজি আছি। কিন্তু বাংলার মেয়েদের ধর্ষণ বন্ধ হওয়া চাই।

তিনি আরো বলেন, “আমি যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেই না। আমার কথা ছাড়ুন, এরা তো কেন্দ্রীয় সরকারকেই মানে না। ইউনুসের মন্ত্রী হলে বেশি কদর পাবে এখানে।”

বিজেপি জানিয়েছে, যতদিন না এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, ততদিন তারা রাজ্যজুড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কটাক্ষ, “তৃণমূলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে পুলিশ বাধা দেয়, কারণ তারা শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।”

নিজের কলেজেই আইনের ছাত্রীকে গণধর্ষিতা হতে হয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে শহর কলকাতা উত্তাল। ঘটনায় প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা মনোজিত মিশ্র সহ দুই পড়ুয়া প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জেব আহমেদকে গতকালই পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। আজ নিরাপত্তা রক্ষীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে গেছে ফরেনসিক টিম। কলেজের ইউনিয়ন ওয়াশরুম এবং গার্ড রুম পরিদর্শন করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলে ছেঁড়া চুল, ধস্তাধস্তির প্রমাণ মিলেছে। এফআইআরে উল্লেখিত, হকি স্টিক এবং বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে নির্যাতিতার যে মেডিকেল টেস্ট হয়েছে তাতে শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বলপূর্বক আঘাদের প্রমাণ। যার মধ্যে যৌনাঙ্গে গুরুতর আঘাত রয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই ধরনের ক্ষত, আঘাতের ধরন, যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *