আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ৭ জানুয়ারি: কুমারগঞ্জে নৃশংস ভাবে খুন হওয়া এক কিশোরীর বিকৃত ঝলসে যাওয়া ছবি ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন। কেউ কেউ আবার ক্ষোভে ফুঁসছেন। কিন্তু কি কারণে বা কোন অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা। দেশের প্রতিটি কোনায় মুহুর্তেই ঘটতে পারে এমন নৃশংসতা ও বর্বরোচিত ঘটনা। গঙ্গারামপুরের উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চগ্রামের কিশোরী শিকার হল এমনই এক নৃশংসতার। নির্জন জায়গায় রাতভর তিন যুবকের লাগাতার ধর্ষণে সজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিল কিশোরী। যদি জ্ঞান ফিরে ওই যুবকদের কুকর্মের কথা সকলকে জানিয়ে দেয় এই আশঙ্কায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা কিশোরীকে প্রথমে পেটে এবং তারপরে গলায় চাকু চালিয়ে রক্তাক্ত করে। প্রমাণ লোপাটের জন্য মোটর বাইক থেকে পেট্রোল বের করে তার সমস্ত শরীরে ছিটিয়ে হিউম পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কিন্তু কি কারণে এই বর্বরোচিত ঘটনা? দারিদ্র কতখানি দায়ী ছিল এই ঘটনার পিছনে। জানাতে গিয়েই কেঁদে ভাসিয়ে দিলেন শোকার্ত মা।
গঙ্গারামপুরের উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা মৃত স্কুল ছাত্রী। বাবা দিন মজুরের কাজ করলেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে তার রোজগারে সংসার চলা প্রায় দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের আর্থিক অনটন কাটাতে মাধ্যমিক পাশ করেই পড়াশুনা বাদ দিয়ে রোজগারে নেমেছিল কিশোরীর একমাত্র দাদাও। সংসারে কিছু রোজগার করতে মাও বেছে নিয়েছিল একটি চটকলে কাজ। যার ফলে বেশীরভাগ সময় বাড়িতে একাই থাকতে হত ওই কিশোরীকে। আর সেই সুযোগকেই কাজ লাগায় প্রতিবেশী তথা এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত মহাবুর মিঞা।
প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে যাবার পথে নানাভাবে ওই কিশোরীকে উত্যক্ত করতো সে। কুপ্রস্তাব দেবার পাশাপাশি ধর্ষণ করবারও হুমকি দিত ওই অভিযুক্ত যুবক। যার ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করলে বাড়িতে এসে চড়াও হত। কিন্তু কাকে জানাবে ছোট্ট ওই স্কুল ছাত্রী। তার মুখের কথাই বা কে বিশ্বাস করবে এমনটা ভেবে কিছুটা ভীত অবস্থায় ছিল সে। মাস চারেক আগে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে ঘরে ঢুকে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে আচড়ে দিয়ে যায় ওই অভিযুক্ত। কেড়ে নিয়ে যায় তার মোবাইল ফোনও। যে ঘটনা জানতে পেরেই অভাবকে উপেক্ষা করে মেয়ের সুরক্ষার দিকে নজর দেয় মা। ছেড়ে দেন চটকলের কাজও। কিন্তু ওই ঘটনায় অভিযুক্তের দাদা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনা আর কখনই ঘটবে না বলে কিশোরীর পরিবারকে আশ্বস্থ করায় দুঃস্থ ওই পরিবার বিষয়টি আদালত বা পুলিশের কাছে নিয়ে যায়নি। ঘটনার পরে পরিবারের লোকেদের গালমন্দে গোয়ায় কাজ করতে চলে যায় মহাবুর নামে প্রতিবেশী ওই যুবক।
এদিকে কিশোরী থেকে যুবতীর দিকে এগোনো ওই ছাত্রীকে তড়িঘড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে তার পরিবারের লোকেরা। কুমারগঞ্জের চাঁদগঞ্জ এলাকায় ছেলে ও তার বাড়িঘরের খোঁজ নিয়ে দেখাশোনাও শুরু করে কিশোরীর বাড়ির লোকেরা। যে খবর শুনতেই বৃহস্পতিবার গোয়া থেকে বাড়ি ফিরে আসে মহাবুর নামে ওই যুবক। শনিবার রাতে ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাবার পরিকল্পনায় বাড়ির কাছে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ওঁত পাতে ওই অভিযুক্ত যুবক। কিন্তু তাদের আনাগোনাতে কিশোরীর পরিবারের লোকেরা সজাগ হতেই এলাকা ছাড়ে মহাবুর ও তার দলবল। যার পরদিন রবিবার দুপুরে মায়ের কাছ থেকে চাদর কিনতে ফুলবাড়ি যায় ওই কিশোরী। যেখান থেকে ফুসলিয়ে মোটর বাইকে তোলে মহাবুর ও এই ঘটনায় জড়িত গৌতম ও পঙ্কজ নামে আরো দুই অভিযুক্ত। মোবাইল কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় তার সুইচ। সন্ধ্যের অন্ধকার নামলেও বাড়িতে না ফেরায় কিশোরীর জন্য খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তার বাড়ির লোকেরা। এদিকে তখন বাড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিমি দুরে সাফানগরের বেলখোর পাকুড়তলার নির্জন এলাকায় লাগাতার ধর্ষণ করে তাকে সংজ্ঞাহীন করে ফেলে ঘটনার তিন অভিযুক্ত। খুন করে পুড়িয়ে দেয় তার দেহ।
ছাত্রীর মা এদিন এই ঘটনা নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, মেয়ে কোনভাবেই পছন্দ করতো না ওই যুবককে। বিয়েতেও রাজি হয়েছিল সে। আর এই ঘটনা জানাই কাল হয়ে গেল মেয়ের। আর ফিরে পাবেন না তার মেয়েকে। অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা হলেই তার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।
বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাব হোসেন মন্ডলরা জানিয়েছেন, পরিবারের লোকেদের দাবিতে সহমত পোষণ করে অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা চান তারাও। একই সাথে এই ঘটনার দ্রুত বিচারের জন্য ফার্স্টট্রাক কোর্টে তোলার দাবি জানিয়েছেন সাংসদ।
স্থানীয় বাসিন্দা শিশু বর্মন বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।