আমাদের ভারত, ১৮ নভেম্বর: বিয়ে কিংবা প্রেম যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই আমরা পরস্পরকে ঠকানোর ঘটনা হামেশাই দেখতে পাই। যে অন্যজনকে ঠকাচ্ছে, তার কাছে ঘটনাটা অত্যন্ত সাধারণ মনে হলেও, যে ঠকছে তার মানসিক অবস্থা টালমাটাল হতে দেখা যায়। মানসিক অবসাদ গ্রাস করে, কখনও বা দিশাহারা হয়ে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনাও মাথায় আসে। যতক্ষণ না সে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে নিজের ক্ষত সারিয়ে ওঠে, ততক্ষণে অন্যদিকের মানুষটা নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
একটা সম্পর্কে ঠকে যাওয়ার পরেও মানুষ পরস্পরের সঙ্গে থেকে গেছে এমন ঘটনাও দেখা যায়। কখনও বা সামাজিক অবস্থান, অর্থের লোভ, সন্তান, পরিবার, সুরক্ষা কিংবা ‘একা থাকার চেয়ে সহ্য করা ভাল’- ইত্যাদি বিভিন্ন দিক ভেবে অনেকেই কিন্তু সম্পর্ক থেকে শেষমেষ বেরিয়ে আসতে পারেন না। যিনি ঠকান তিনি অনেক সময়ই নিজের ভুল বোঝার পরিবর্তে মনে করেন, তিনি যা করেছেন সেটাই ঠিক। তাই ঠকে যাওয়ার পর একটা সম্পর্কে না থেকে তার থেকে বেরিয়ে আসাই উভয়ের জন্য মঙ্গল।
পরস্পরকে কেন ঠকানো হয় তার কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলঃ
কম বয়সে যে সব প্রেম শুরু হয়, পরিণত হওয়ার পর মনে হতে থাকে হয়তো বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সঙ্গী হয়তো কাঙ্খিত মনের মানুষ নয়। এমন ভাবনা চিন্তা জন্ম নিলে মানুষের মধ্যে ঠকানোর প্রবণতা দেখা দেয়।
আবার, কতজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো গেল- লোক দেখানোর এই প্রবণতা থেকেও ঠকানোর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সিনেমা-সিরিয়াল কিংবা গল্প-উপন্যাস থেকে বা আশপাশে কোনও পরিচিত মানুষদের দেখে বিভিন্ন মানুষের মনে ভালোবাসার একটা নির্দিষ্ট ধারণা তৈরি হয়। সঙ্গীর তুলনায় এই ধারণাকেই তারা বেশি ভালোবাসে। আর যখনই বাস্তবের সঙ্গে তাদের ধারণার বিভেদ দেখা দেয়, তখনই তারা তাদের কাঙ্খিত ভালোবাসার খোঁজে নিজের সঙ্গীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
অনেকেরই সঙ্গীর থেকে অনেক বেশি চাহিদা থাকে। সম্পর্কে সমতার পরিবর্তে তারা মনে করে সঙ্গী ঈশ্বর জ্ঞানে তাকে পুজো করবে। কিন্তু বাস্তবে যখন তা হয় না, তখনই সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং ঠকানোর প্রবণতা দেখা যায়।
অনেকেই সম্পত্তির লোভে কাউকে স্বামী বা স্ত্রী হিসাবে বেছে নেয়। একদিকে সঙ্গীর সম্পত্তি ভোগ করে, আবার তাকে ঠকিয়ে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখে।
যৌনতাপ্রেমী মানুষরা তাদের সঙ্গীর থেকে সন্তুষ্ট না হলে, আরও ভালো যৌনতার আকর্ষণে সঙ্গীকে ঠকানো শুরু করে এবং তার অগোচরে এক বা একাধিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার বিভিন্ন মানুষ মদে আসক্তির ফলে বিভিন্ন পার্টিতে যায়। সেখানে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে নিজের সঙ্গীকে ঠকানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘লং ডিসটেন্স’ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখা যায়। আবার কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে মুক্তির উপায় খুঁজে নেয়।
বিয়ের বহু বছর পর যখন সম্পর্কের মিষ্টতা হারিয়ে যায়, তখন অনেক সময় মানুষ তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে মানসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করে।
অনেকেই আবার পরিবারের চাপে তাদের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে পারে না। তখন পরিবারের পছন্দে বিয়ে করার পরে সঙ্গীকে ঠকিয়ে সমান্তরাল ভাবে নিজের পছন্দে অন্য সম্পর্ক চালিয়ে যায়।
স্বামীর বন্ধু বা বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের বহু উদাহরণ আমরা যুগে যুগে পেয়েছি।
যেসব শিশুরা মা বাবার বিচ্ছেদ দেখে বড় হয়, তারা অনেক সময়ই বিশ্বাসঘাতকতাকে অন্যায় মনে করে না। তারা মনে করে ঠকানো সাধারণ ব্যাপার।
ছোটবেলায় খেলার সঙ্গীকে বড় হওয়ার পর অনেক সময় যেমন পছন্দ হয় না, তেমনই স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মতের মিল না হলে তখন তাকে ঠকিয়ে অন্য সঙ্গী খুঁজে নিতে চায় মানুষ।
না ঠকিয়ে কথা বলে সমস্যার মীমাংসা করুন। যতই সমস্যা হোক, একে অপরের সঙ্গে কথা বলুন। নিজের সমস্যার কথা জানান, পরস্পরকে বুঝতে শিখুন। কোনও মানুষই নিখুঁত নয়। পরস্পরের দোষ গুণ মেনে পরস্পরকে ভালোবাসুন। ভালো থাকুন।