ড. কল্যাণ চক্রবর্তী
আমাদের ভারত, ২৭ জানুয়ারি: আসলে আপনাকে কেউ ফলো করছেন না। আপনাকে কেউই শাস্তি দেবার জন্য অপেক্ষায় নেই। আপনার অপরিসীম অশুভ-আঁতাতেরও সমালোচনা করছেন না কেউ। আসলে আপনি নিজের রাডারেই ক্রমাগত নিত্যদিন লাঞ্ছিত হচ্ছেন। যে দলটি আপনার এখন আয়ত্তের মধ্যে, যে দলটির সৌকর্যে এদিন মহীয়ান হবেন আপনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই দলের সদাজাগ্রত বিবেক আপনার মধ্যেই পরমশান্তিতে আপনাকে বলছেন, ‘তোমার চৈতন্য হোক’। বিবেক যখন নিজেকে পীড়া দেয়, তার চাইতে বড় শাস্তি আর হয় না।
চারপাশের অসংখ্য অসাধুতার বিপ্রতীপে আপনি যদি নিরপেক্ষও থাকেন, তবুও মানুষ্যত্ব আছে আপনার। যদি অসাধুতার বিপ্রতীপে আপনি সোচ্চার ও সবল হন, তখনই আপনার দেবত্ব। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখছেন, “আমাদের মা নাই, বাপ নাই, ভাই নাই, বন্ধু নাই, পুত্র নাই, ঘর নাই, বাড়ি নাই, আমাদের আছে কেবল সেই সুজলা সুফলা মলয়জ সমীরণ শীতলা শস্যশ্যামলা মা।” মায়ের নামে যে দল গড়ে উঠেছে, ভারতমাতার জয়ধ্বনি উত্থিত হয় যে দলে, সেই দলে দাঁড়িয়ে আপনার নৈতিকতার চাইতেও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে নিজেকে ক্ষমা করতে না পারা। আপনি কি একদিন নিজেকে বলবেন না, “ক্ষমিতে পারিলাম না/ক্ষম হে মম দীনতা।”
পরিবারের, স্বজন-বান্ধবের শুভ-সৌকর্যের বন্ধন যেখানে একান্তই ক্ষুদ্র সীমিত, সেখানে সামগ্রীর ডাক, সম্পদের অশুভের ডাক কী আপনি ফেলতে পারছেন না? কতটা গভীরে আপনার নোঙর? কী সেই মোহ, যা আপনাকে অনবরত দেবতার ডাককে উপেক্ষা করতে বলে? তার মানে আপনি মোহবদ্ধতার ফাঁদে পড়ছেন। মোহ সর্বদাই মোহনীয়, এটা কেউ আমাকে আপনাকে শেখাবেন না। সরল মোহের চাইতে সঙ্কটের মোহ কি একান্তই জরুরি? তবে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধুন নিজেকে ওখানেই, তাতে পাপ নেই, বেঁচে থাকার জন্য সবই দস্তর। বাঁচবার চাইতে বড় কিছু চাইলে তা কিন্তু অশুভ আপনাকে দিতে পারবে না। ঘোষিত দুর্নীতি তবুও ঈশ্বর ক্ষমা করতে পারেন। অঘোষিত, পরাজিত দুর্নীতি আপনাকে ভেতর থেকে বাঁচতে দেবে না। নিজের অন্তরে, নিজের বিবেকের কাছে নিজের মনের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাথা, পৃথিবীর কোনো বেদনার চাইতে আজ পর্যম্ত মর্মান্তিক বলে প্রমাণিত হয় নি।
“জননী জন্মভূমিশ্চ স্বার্গাদপী গরীয়সী, আমরা বলি জন্মভূমিই জননী।” এই দলে আপনার সৌকর্য কীভাবে বাড়বে, তার জন্য ধ্যানযোগ দরকার।