রায়গঞ্জের কুলিক অরণ্যে বাঁশি বাজায় কে?

স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর ১৭ জানুয়ারি: সুরের মূর্ছনায় আবেগের আনন্দে ভেসে ওঠে মন, ওই বুঝি বাঁশিওয়ালার বাঁশি বেজে ওঠে বনানীর কোলে। থেমে যায় কাকলির কলতান। কুলিক অরন্যে বেজে ওঠে বাঁশিওয়ালার গান। প্রতিদিন সকালের সূর্য মধ্য গগনে ওঠার আগেই রায়গঞ্জ কুলিক অরন্য সংলগ্ন শিয়ালমনি অরন্যে বেজে ওঠে বাঁশির সুর! কে বাজায়! এতো সই বংশীবদন নয়! এতো বোগ্রামের বাসিন্দা পার্থ সূত্রধর। হ্যামিলটনের বাঁশিওয়ালার মতোই সুরের যাদুতে মানুষের মনে একজন বংশীবাদক হয়েই বেঁচে থাকতে চেয়ে দিনরাত সুরের মূর্ছনা তুলতে সাধনায় মগ্ন থাকতে চান বর্তমান প্রজন্মের যুবক পার্থ। কুলিক নদীর ধারে শিয়ালমনি অরন্যে সকাল থেকে বিকেল আপন মনে বাঁশির সুরের সাধনায় মগ্ন থাকা পার্থকে দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান। হাতের ছোট্ট বাঁশিতে নানান সুরের আন্দোলনে উদ্বেলিত করে তোলেন বনানির আকাশ ও বাতাস।

রায়গঞ্জের বোগ্রামের বাসিন্দা পার্থ সূত্রধরের পারিবারিক ব্যাবসা কাঠের আসবাবপত্র নির্মানের। আর্থিক প্রতিকূলতার বাধা কাটিয়ে সাফল্যের সঙ্গে ইংরেজি বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা অর্জন করেছেন তিনি। এলাকার ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি তাঁর। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বাঁশি বাজানোটা তাঁর আত্মার সঙ্গী হিসেবে জড়িয়ে রয়েছে। তাঁর সঙ্গীতের প্রথম শিক্ষাগুরু বিখ্যাত স্যাক্সোফোন বাদক কিরন রাই। তাঁর কাছ থেকেই বাঁশি বাজানোর প্রথম পাঠ তাঁর। এখন কলকাতার বংশীবাদক শিল্পী সঞ্জয় ব্যানার্জির কাছে নিয়মিত তালিম নেন পার্থ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সঙ্গীত অ্যাকাডেমির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন গানের দলের সাথে সঙ্গত করে কিছু অর্থ উপার্জন করেন রায়গঞ্জের বাঁশিওয়ালা পার্থ সূত্রধর। ইচ্ছে জাতীয় স্তরের নানান সঙ্গীতানুষ্ঠানে বাঁশির সঙ্গত করার। ভবিষ্যতে আরও বড় বংশীবাদক হয়ে খ্যাতি অর্জন করতে চান তিনি। তাই সকাল হলেই ছুটে আসেন কুলিক নদীর ধারে শিয়ালমনি অরন্যের কোলাহল শূন্য বনানির মাঝে। যেখানে পাখিদের কলতানের মাঝেই সুরের মূর্ছনা তুলে মানুষের মনে সাড়া ফেলে দেন তিনি। চলে নিরন্তর বাঁশির সূর, সাক্ষী থাকে শাল পিয়াল আর মহুয়ার দল আর পাখিদের কলতান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *