প্রদীপ দাস, আমাদের ভারত, কলকাতা, ৭ অক্টোবর: আরএসএস এর সদর কার্যালয় কেশব ভবন কি এখন বিজেপির দ্বিতীয় পার্টি অফিস হয়ে উঠেছে? এই প্রশ্ন আরএসএসের সদস্যদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিজেপির অনেক কার্যকর্তাও তাই মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, তা না হলে হঠাৎ কেন বিজেপির নেতাদের আনাগোনা কেশব ভবনে বেড়ে গেছে? কেন কেশব ভবন এর সামনে বিজেপির পতাকা লাগানো গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে? তাহলে কি এখন বিজেপির ক্ষমতার কেন্দ্র মানিকতলা কাছে অভেদানন্দ স্ট্রিটের কেশব ভবন?
আরএসএসের এই কার্যালয়ে থাকেন সংঘের প্রচারকরা। এই প্রচারকদের কাজ সংঘের শাখার বিস্তার করা। শাখার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। সকালে বিকালে বিভিন্ন শাখায় গিয়ে তাঁরা স্বয়ং সেবকদের ব্যায়াম, খেলাধুলা শেখান। তার মধ্যে লাঠি খেলাও রয়েছে। এর পরে তাঁরা স্বয়ংসেবকদের দেশাত্মবোধের কথা এবং বিভিন্ন প্রবচন শোনান। এছাড়া দেশাত্মবোধক গান শেখান। তাই তাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্কই নেই। অথচ প্রচারকদের তথা আরএসএসের সেই কেশব ভবনে হঠাৎ বিজেপি নেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেল কেন? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কী কারণে কেশব ভবন এখন বিজেপি নেতাদের গন্তব্য স্থল হয়ে উঠল? –যাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই! তাও আবারা সাধারণ নেতা নয়, বিজেপির তাবড় তাবড় নেতা কেশব ভবনে নিয়মিত যাচ্ছেন। মূলত তৃণমূল থেকে আসা নেতারাই কেশব ভবনে ভিড় করছেন। মাঝে মাঝেই দেখা যায় বিজেপির পতাকা লাগানো গাড়ির সারি। গাড়ি থেকে বিজেপির কোনও বড় মাপের নেতা নেমে সোজা ঢুকে যাচ্ছেন কেশব ভবনে। প্রশ্ন কিসের শলাপরামর্শ করতে আসেন নেতারা? তারা কি এলাকায় সংঘের শাখা বিস্তার করার জন্য আসছেন কেশব ভবনে?
সম্প্রতি বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি হয়েছেন মুকুল রায়। তার জন্য মুকুল অনুগামীদের ভেতর আনন্দের জোয়ার বইছে। সেই দিনই তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় চুঁচুড়াতে। আর সম্বর্ধনা সভাতেই কেশব ভবন থেকে একটা ফোন গিয়েছিল তাঁর কাছে। ফোনের অপরপ্রান্তে কে ছিলেন তা মুকুল রায়ের কাথা থেকেই জানা যায়। মুকুল রায় ফোনটা ধরে বলেছিলেন প্রদীপজি আপনার জন্যেই এটা সম্ভব হয়েছে অর্থাৎ মুকুল রায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি হয়েছে। মুকুল রায়ের মত নেতার বিজেপিতে বড় পদ পাওয়ার ঘটনায় পরিস্কার হয়ে গেছে যে, কেশব ভবন থেকে বিজেপির অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। আর এই নিয়ন্ত্রণের কর্তা আরএসএসের ক্ষেত্রীয় প্রচারক প্রদীপ জোশি। তাঁর ইচ্ছাতেই নাকি অনুপম হাজরা, সৌমিত্র খাঁ, অগ্নি মিত্রা পাল এবং মুকুল রায় বিজেপিতে বড় পদ পেয়েছেন।
জানা গেছে তৃণমূল থেকে আসা নেতারাই নিয়মিত প্রদীপ জোশির সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে কেশব ভবনে যান। শুধু তাই নয়, নিয়মের কোনও তোয়াক্কা না করে সোজা লিফটে চড়ে চলে যাচ্ছেন চারতলার ৩৭ নম্বর ঘরে। তারপর চলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এদের মধ্যে রয়েছেন মুকুল রায়, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ এবং শঙ্কুদেব পান্ডা।
আরএসএসের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানাগেছে, প্রদীপ জোশির সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে বিশেষ করে সংগঠন সম্পাদক বিএল সন্তোষের সঙ্গে। সেই কারণেই প্রদীপ জোশি এখন যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন। সেই কারণেই আরএসএসের কার্যালয় এখন বিজেপির দ্বিতীয় পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে বলে বিজেপির একাংশের দাবি।
সংঘ এবং বিজেপির সংঘ ঘনিষ্ট নেতাদের বক্তব্য, আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এই নেতারা এখন প্রদীপ জোশির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাদের লক্ষ্য বিধানসভা ভোটে নিজের বেশি সংখ্যক অনুগামীদের টিকিট পাইয়ে দেওয়া। বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে গোটা দল চলে যাবে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের দখলে। ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা শ্লোগান একটু অন্যরকমভাবে সংঘ পরিবারের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তা হল
বর্ধমানে…
– তৃণমূল,
বাঁকুড়াতে…
– তৃণমূল,
হুগলিতে…
— তৃণমূল,
কোচবিহারে…
— তৃণমূল,
……
……
শেষে বিজেপিতে…
তৃণমূল!! 😂
সংঘ ঘনিষ্ট নেতাদের আশঙ্কা, তৃণমূল থেকে আসা নেতারা যদি বিধানসভা ভোটে কমপক্ষে ৫০টা আসন জিততে পারে তাহলে গোটা দলের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে তাদের হাতে। পালটে যাবে বিজেপির ঘরানা।