“বিষয় যাই হোক, গবেষণার লেখা হতে হবে সহজ”— পরামর্শ প্রবীন গবেষকের

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ৯ ডিসেম্বর: গবেষণাপত্র লেখাটা একটা শিল্প। বিজ্ঞানভিত্তিক বা ঐতিহাসিক তথ্য সাজানো এবং পরিবেশনার শিল্প। এর উৎকর্ষতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে গবেষণাপত্রের গ্রহণযোগ্যতা।

শুক্রবার ‘হাউ টু রাইট এ রিসার্চ রিপোর্ট, এ ডকুমেন্টেশন অফ রিসার্চ জার্নি’ শীর্ষক আলোচনায় এই মন্তব্য করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডঃ সুদেষ্ণা লাহিড়ী। তিনি বলেন, থিসিসের বিষয় নির্বাচন থেকে লেখার ধরণ, প্রবাহমনতা— সব কিছুই ব্যাকরণ মেনে হবে। কিন্তু জটিলতা আনলে চলবে না। গল্পের মত প্রাঞ্জল হতে হবে।“

রবীঠাকুর লিখেছিলেন না— ‘‘সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে/ সহজ কথা যায় না বলা সহজে…।” কিন্তু থিসিসের রিপোর্টিংটা সহজই হতে হবে। সুদেষ্ণার কথায়, “যে বিষয়ের ওপর গবেষণাপত্র লিখছি, আমার সম্যক জানতে হবে এই বিষয়ের ওপর আগে কে, কী লিখেছেন, তার বৃত্তান্ত।“ লিখতে গিয়ে কী যে লিখব সেটাই বেশ কঠিন হয়ে যায়। বিষয়ের বাইরে গিয়ে একেবারে নতুন কিছু তৈরি করা বা গড়ে তোলা মোটেও সহজ কাজ নয়। গবেষণাপত্র লেখার জন্য তাই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হবে।

কিন্তু আদর্শ গবেষণাপত্রের বিষয় ও আকারের কি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে? সুদেষ্ণা জানান, “নেই। আমার পিএইচডি-র বিষয় ছিল ‘স্টুডেন্টস ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড টিচার্স ইন রিলেশন টু জেণ্ডার বায়াস অ্যান্ড স্ট্রিম অফ স্টাডিজ’। যতদূর মনে আছে ১৮০ পৃষ্ঠার মত হয়েছিল। ৩০ পৃষ্ঠার থিসিসের কথাও শুনেছি। আবার শুনেছি ৫০০ পৃষ্ঠার রিপোর্টও গৃহীত হয়নি। বিষয়, তথ্য প্রভৃতির সঙ্গে লেখার আদলটাও বিবেচ্য।“

কত সময় কত কথাই তো মনের মধ্যে প্রভাব কাটে। কিন্তু কতটা সার্থকভাবে তা প্রকাশ করা যায়? লিখতে গেলেই ভাষার প্রকাশ খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়। এলোমেলো শব্দকে সঠিক বিন্যাসে সাজানোই সম্ভবত আসল চ্যালেঞ্জ। লেখা ছাড়া দক্ষ গবেষক হতে গেলে কোন গুনটাকে এক নম্বরে রাখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুদেষ্ণা বলেন, “প্রচুর পড়তে হবে। একনিষ্ঠ পাঠক হতে হবে। আমি অন্তত রোজ দেড় ঘন্টা খবরের কাগজ পড়ায় সময় দিই। কাগজ খুঁটিয়ে না পড়লে কোনও বিষয়ের বিশদ কি জানা সম্ভব?

কলকাতায় বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটিতে (বিএসএইইউ, পূর্বতন দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স ট্রেনিং, এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) ‘রিসার্চ মেথডোলজি’ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সাত দিনের একটি শিক্ষাশিবির বুধবার শুরু হয়েছে। সেখানেই শুক্রবার তৃতীয় দিন বক্তৃতা দেন সুদেষ্ণা লাহিড়ী।

শিবিরে এদিন আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ দেবযানী গুহ। তিনি বলেন, ’এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ ডিজাইন অর কোয়ালিটেটিভ ডেটা অ্যানালিসিস’ নিয়ে। ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীন অধ্যাপক ডঃ বেনুধর চিনার। পরিচালনায় ছিলেন বিএসএইইউ-এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডঃ বিশ্বজিৎ বালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *