গৌতম ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, কলকাতা, ৮ মার্চ: আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন দক্ষিণ কলকাতার CISCE বোর্ডের অন্তর্গত মনসুর হাবিবুল্লা মেমোরিয়াল স্কুলের (পূর্বনাম: সাউথ এন্ড স্কুল) সেকেন্ডারি ও সিনিয়র সেকেন্ডারি ক্লাসের ইংরেজি সাহিত্য ও ভাষার শিক্ষিকা এবং বর্তমানে সেই স্কুলের প্রিন্সিপাল সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য।
(১) মহিলাদের ক্যারিয়ার তৈরীর প্রতিযোগিতায় ঘর-সংসার কি অন্তরায়?
উঃ—আমার মতে আজকের যুগে যেখানে মহিলারা ক্যারিয়ার তৈরীর ব্যাপারে সত্যিই আন্তরিক সেখানে ঘর-সংসার করা অন্তরায় হয়ে ওঠে না। ইচ্ছে থাকলে পথ একটা বেড়িয়েই যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কিছু মহিলা আছেন যারা ক্যারিয়ার তৈরী করতে না পারার পেছনে ঘর-সংসার সামলানোর অজুহাতটাই দেন। আমার এই যুক্তিটা একেবারেই “বাহানা” বলে মনে হয়। আজও অনেক মহিলাই আছেন যারা বিয়ে এবং সন্তান পালনের বৃত্তের মধ্যেই জীবনের তৃপ্তির সন্ধান করেন। তাঁদের বাইরের জগতে গিয়ে ক্যারিয়ার তৈরীর প্রসঙ্গে কোনও সত্যিকারের আগ্রহই নেই কিন্তু লোকসমাজে সেই আগ্রহের অভাবের কথা না বলে সাংসারিক দায়িত্বকেই কর্মজীবনে প্রবেশ না করার কারণ হিসেবে দেখান।
(২) বিয়ে-সন্তানের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসায় সেই মহিলার বা সামগ্রিক সমাজের কি কোনও সমস্যা হতে পারে?
উঃ— মহিলাদের ক্যারিয়ার করতে হলেই যে বিয়ে, সন্তান-পালন বা সংসারের দায়িত্ব থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে তার কোনও যুক্তি নেই। স্বামীর সঙ্গে বা পরিবারের অন্য সকলের সঙ্গে সামান্য একটু বোঝাপড়া থাকলে দু’ধরণের দায়িত্বই সুষ্ঠভাবে পালন করতে মহিলাদের কোনও সমস্যা হয় না। বাইরের জগতে নিজেকে উজার করে দিয়েও, যে মহিলা সুষ্ঠভাবে ঘর-সংসারের দায়িত্ব পালন করেন, সেই মহিলার ব্যক্তিত্বও অনেক বিকশিত হয় এবং এতে পরিবার ও সমাজ উভয়ই সমৃদ্ধ হয় – সমস্যার কোনও ব্যাপারই নেই।
(৩) “প্রভু, মিটিয়াছে সাধ? এই সুললিত
সুগঠিত নবনীকোমল সৌন্দর্যের
যত গন্ধ যত মধু ছিল সকলি কি
করিয়াছ পান! আর-কিছু বাকি আছে?”
নয় দশক আগে রবীন্দ্রনাথের লেখা। এখনও কি সমাজে নারী ‘নবনীকোমল সৌন্দর্যের’ প্রতীক? না, নারীর ভাবমূর্তি আমূল বদলে গিয়েছে? আপনি কী মনে করেন?
উঃ—কিছুটা পরিবর্তিত হলেও সমাজ এখনো পুরুষ শাসিত এবং পুরুষের চোখে আজও নারীর নবনীকোমল সৌন্দর্যের গুরুত্ব একেবারে চলে যায়নি। তবে আজকের পুরুষ নারীর মধ্যে শুধু সৌন্দর্যই নয়, বুদ্ধির বিকাশও দেখতে চায়। এখানেই পুরুষের চোখে নারীর ভাবমূর্তির বিবর্তন হয়েছে বলা যায়। শুধু পুরুষই বা কেন, আজকের নারীও পুরুষের মধ্যে সন্ধান করে দৃপ্ত বুদ্ধিমত্তার। কর্মজগতে নারীই হোক বা পুরুষ, সে যদি নিজেকে মার্জিত রুচিতে সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করেন তবে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা অন্যদের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। সকলেরই সেদিকে যত্নবান হওয়া উচিত।