স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১৮ নভেম্বর:
সাঙ না হলে এবার ভোট বয়কট করা হবে বলে ব্যানার পড়ল কৃষ্ণনগরের নাগরিকদের নামে। কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্য জগদ্ধাত্রী মূর্তি গাড়িতে নয় কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয়। একে বলা হয় সাঙ। কিন্তু বর্তমানে যদি সেই সাঙ বন্ধ হয় করোনার জন্য তাহলে তারা ভোট বয়কট করা হবে–এমনই হুমকি দিয়ে কৃষ্ণনগরে ব্যানার পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
সম্প্রতি করোনার জন্য দুর্গা পূজো এবং কালীপুজোয় হাইকোর্টের বিধি-নিষেধকে মান্যতা দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনের তরফ থেকে পুজো করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো পুজো হয়েছে। কিন্তু এখন সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো। আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কৃষ্ণনগরে এই পূজার প্রচলন করেছিলেন। তখন থেকেই জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের সঙ্গে সাঙ যাওয়ার প্রথা চলে আসছে। প্রতিবছর এই দিনটার জন্য কিছু নগরবাসী অপেক্ষা করে থাকেন।
চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী সাঙদের কাঁধে চড়ে মা জগদ্ধাত্রী শহর পরিক্রমা করেন, তারপর জলঙ্গী নদীর ঘাটে নিরঞ্জন হয়। কিন্তু এবার করোনা আবহে সেরকম কিছু হবে না, প্রশাসন প্রথম থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষ্ণনগর শহরের মানুষের মন খারাপ। তারা আশঙ্কা করছেন এবারে তাদের সাঙ করতে দেওয়া হবে না। তাই তারা আগে থেকেই ব্যানার লাগিয়েছেন কৃষ্ণনগর নাগরিকদের নামে। সেখানে বলা হয়েছে” বন্ধ হলে সাঙ বয়কট হবে ভোট দান।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় মানুষের দাবি সাঙ করতে দিতে হবে। যেখানে করোনা আবহে রাজনৈতিক মিটিং মিছিল হচ্ছে, শপিং মল থেকে শুরু করে ট্রেন চলাচলের মতন সিদ্ধান্ত যখন সরকার নিতে পেরেছে, তাহলে এতদিনের পুরনো ঐতিহ্য সাঙের বেলায় না কেন?
মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে পুজো কমিটিগুলোর সমন্বয় বৈঠকে এই সাঙ নিয়ে জট কাটেনি। বৈঠকে বুড়িমার পুজোর আয়োজক চাষাপাড়া বারোয়ারি থেকে শুরু করে অন্যান্য বেশকিছু পুজো কমিটি প্রতিমাকে সাঙ করে নিয়ে যাবার অনুমতি চান। আবার অনেকেই সাঙ বন্ধ না করার দাবি তোলেন। এমনকি কোনো কোনো বারোয়ারি কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি পর্যন্ত যাবার অনুমতি চান। কিন্তু পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ জানিয়ে দেন তা এবার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। “হাইকোর্টের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।”
শহরের সমস্ত পুজো কমিটিকে নিয়ে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সমস্ত সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশিকা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।