সর্বত্র ছাপ্পার অভিযোগ, অশান্তির আবহে ভোট হল বীরভূমে

আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ২৭ ফেব্রুয়ারি: সর্বত্র অশান্তির আবহে ভোট হল বীরভূমের তিনটি পুরসভায়। দুটি পুরসভায় কয়েকটি আসনে ভোট হলেও সেখানেও ছাপ্পা মারা হয়েছে বুথ দখল করে। পুলিশ সিপিএম ও বিজেপির দুই প্রার্থীকে থানায় আটকে রেখে অবাধ নির্বাচন করালো।

বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভায় ১৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫ টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করে তৃণমূল। ১৩ টি ওয়ার্ডে সকাল থেকে নির্বঘ্নে ভোট হলেও বেলা বাড়তেই বুথ দখল করে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা। সর্বত্র বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ফের দেখল রামপুরহাট শহরের মানুষ। দুপুরে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩৭ নম্বর বুথ দখল করতে যায় কিছু দুষ্কৃতী। সেই সময় সিপিএম প্রার্থী সঞ্জীব মল্লিক প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে পুলিশের সামনেই বেধড়ক মারধর করে দুষ্কৃতীরা। মারধর করা হয় সঞ্জীবের পরিবারকেও। সেখানেই ভাঙ্গা হয় ইভিএম। পুলিশের দাবি, সঞ্জীব মল্লিক ইভিএম ভেঙ্গেছে, এই অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রতিবাদে সিপিএম দুমকা রোড অবরোধ করে। এরপর পুলিশ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ সহ তিনজনকে আটক করে। ঘণ্টাখানেক পর নতুন ইভিএম নিয়ে এসে ভোট শুরু হয়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিকেলে ১০৮ নম্বর বুথ দখল করতে গেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিজেপি প্রার্থী রশ্মি দে। এইনিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। এরপরেই পুলিশ রশ্মি দে’কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের অভিযোগ, রশ্মি দে ইভিএম ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে। যদিও প্রিজাইডিং অফিসার এবং সেক্টর অফিসার পরিস্কার জানিয়েছেন, ইভিএম ভাঙ্গার কোনো চেষ্টা হয়নি।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল ধীবর নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমি এবং আমার পরিবার যখন ভোট দিতে গেলাম তখন জানালাম ভোট হয়ে গিয়েছে। শুধু আমি নয়, পরিবারের কেউ ভোট দিতে পারেনি”।

এছাড়া রামপুরহাট পুরসভার বাকি ওয়ার্ড গুলিতে বুথ দখল করে ভোট করা হয়েছে। সঞ্জীব বর্মণ বলেন, “শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাদের প্রার্থীকে মারধর করেছে। ইভিএম ভেঙ্গেছে। পুলিশ উল্টে আমাদের প্রার্থীকেই গ্রেফতার করেছে। তারই প্রতিবাদ করছিলাম। আমাদের পুলিশ আটক করল”।

রামপুরহাটের বিধায়ক, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোথাও অশান্তি হয়নি। সর্বত্র শান্তিতে ভোট হয়েছে। সিপিএম প্রার্থীকে মারধরের কোন অভিযোগ থাকলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে”।

দুবরাজপুর পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী এবং নির্বাচনী এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। ২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির এজেন্ট চন্দ্রশেখর গুপ্তাকে মারধর করেছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী রীনা বাগদি এবং পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের এনে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। ওখানকার নির্দল প্রার্থী ভূতনাথ মন্ডলের মোবাইল ফোনটিও পুলিশ কেড়ে নিয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে দুষ্কৃতীদের বুথের মধ্যে ঢুকিয়ে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূল। 

দুবরাজপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, “সকালেই ভোট শুরু হতেই দুবরাজপুরের বুথে বুথে ছাপ্পা দিয়ে তৃণমূল বৈতরণী পার হতে চাইছে। এতে সম্পূর্ণ মদত করেছে পুলিশ। এদিন প্রতিটি বুথে তৃণমূলের বহিরাগত গুন্ডারা ভিড় করেছিল। এভাবে দিনভর দুবরাজপুর পুরসভার ঘৃণ্য রাজনীতি চাক্ষুষ করল দুবরাজপুরের সকল শ্রেণির মানুষ। আমি ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি এবং ধিক্কার জানাচ্ছি”।

এনিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলার সহকারি সভাপতি তথা দুবরাজপুরের মানুষ মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপিই ওয়ার্ডে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের কর্মী ধীমান লাহা, লালটু সেন, প্রবোধ মুখোপাধ্যায়ের ঘরে ঢুকে লুটপাট চালিয়েছে। আসবাবপত্র ভেঙ্গে দিয়েছে। সঠিক সময়ে পুলিশ গিয়ে বিষয়টি প্রতিহত করেছে।

ছাপ্পা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবটাই মনগড়া কথা। মানুষ ওদের সঙ্গে নেই। ভোটে হেরে যাবার আশঙ্কায় নানা কথার অবতারণা করছে”। সাঁইথিয়া পুরসভায় ২ টি আসনে ভোটেও ব্যাপক ছাপ্পা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিরোধীরা।

এদিকে সর্বত্র সন্ত্রাসের অভিযোগে জেলা শাসকের অফিসে অবস্থানে বসে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “জেলার মানুষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ দেখল। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেনি। এটাই নাকি গণতন্ত্র। মানুষ ছাপ্পা তৃণমূলের বিরুদ্ধে একদিন গর্জে উঠবেই”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *