Villagers, Bhadul Surpangar, ভাদুল- সুরপানগরে দ্বারকেশ্বর সেতু নির্মাণে ২০১৬- এর পুনরাবৃত্তি চায় না গ্রামবাসীরা

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৩ জুন: ফের দ্বারকেশ্বর নদীর ওপর ভাদুল সুরপানগরে সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার মুখে এলাকার গ্রামবাসীদের মনে প্রায় একদশক আগের স্মৃতি ফিরে আসছে। তারা চাইছেন, আগেরবারের মতো সেতু নির্মাণের কিছু দিন পরেই জলের তোড়ে তা একপ্রকার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। বর্ষার আগে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই সেতু নির্মাণ হবে। বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬- এর ঠিক আগে আগে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতেই গ্রামবাসীদের মনে গত ২০১৬- এর স্মৃতি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, বাঁকুড়ার ভাদুল সুরর্পানগরে দ্বারকেশ্বর নদীর ওপর গত ২০১৬ সালে নির্বাচনের ঠিক আগে বর্ষার সময় কজওয়ে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঠিক এখনকার মতই। এই কজওয়ে তৈরির সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে দ্বারকেশ্বরে বান এলে কজওয়েটি টিকবে তো? কজওয়ে চালু হওয়ার মাত্র চার মাসেই গ্রামবাসীদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দ্বারকেশ্বরের জলস্রোত প্রবল বেগে কজওয়ের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এই জলস্রোত কমার পর নজরে আসে যে ভাদুল সংলগ্ন এলাকায় কজওয়ের অনেকখানি অংশ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নদীর ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই সময়ও প্রশ্ন উঠেছিল যে কোটি টাকা দিয়ে তৈরি কজওয়েটি পরিকল্পনার ভুলে না দুর্নীতির কারণে বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। সেই সময়, অবশ্য রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করে ছিলেন যে, কজওয়ে নষ্ট হয়নি। বালির ওপর কংক্রিটের ব্লক বসিয়ে কজওয়ের সংযোগকারী যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল প্রবল জলের তোড়ে সেগুলি সরে গিয়েছে। ওগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। এ জন্য কোনও বাড়তি খরচ হবে না।

অন্যদিকে বাঁকুড়া শহর ও ওন্দা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছেন ভাদুল ও সুরর্পানগর দ্বারকেশ্বর স্থায়ী সেতু তৈরির। বছরের শুখা সময়ে এই নদীর ওপর বোল্ডার ও বালির অস্থায়ী রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় তা বন্ধ হয়ে যায়। গত ২০১৬ সালে নির্বাচনের মুখে ঝড়ের গতিতে সেতুর বদলে কজওয়ে তৈরি করে সেচ দফতরের কংসাবতী বিভাগ। এজন্য প্রায় ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা খরচ করে। কিন্তু ৪ মাসের মধ্যেই নদীর স্রোতে তা ভেঙ্গে যায়।তৎকালীন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু কজওয়ের সমস্যা ছবি সহ লিখিত ভাবে রাজ্য সেচ দফতরেও জানিয়েছিলেন।সেই থেকে প্রতিবছর অস্থায়ী সংস্কার করে পারাপারের কাজ চলছে।

আগামী বিধানসভা ২০২৬- এর নির্বাচনের আগে ফের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় ২০১৬- এর অভিজ্ঞতায় এবারের নির্মাণ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন গ্রামবাসীরা। দ্বারকেশ্বরের মতো বড় নদীতে এই ধরনের কজওয়ে বানানো কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার। গত ২০১৬ বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না করেই কয়েক মাসের মধ্যেই সেই কজওয়ের কাজ শেষ করে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কজওয়েটি চালু হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই কজওয়ের রাস্তায় ফাটল ধরা পড়ে। কজওয়ের তলায় নদীর জল বের হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিমাণ পাইপ বসানো হয়নি বলে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছিলেন সেই সময়। এতে কজওয়েতে জলের স্রোত ধাক্কা মারছিল। বর্ষার শুরুতেই নদীতে জল বাড়তেই কজওয়ের রাস্তা একেবারে ভেঙ্গে যায়। ওন্দার সুরর্পানগর গ্রামের বাসিন্দাদের আক্ষেপ, প্রতি বছর বর্ষায় এই নদীর জল বেড়ে গেলে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের সেতু ধরে বাঁকুড়ায় যেতে হয়। পারাপারের কজওয়ের একাংশ বানের তোড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। পাশের রেলসেতু দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হলো এক বৃদ্ধার। দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে সুরর্পানগর, বীরবাঁধ, বালিয়াড়া, সোনাতপলের মতো বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিদিন জীবিকার টানে বাঁকুড়ায় আসেন। নদীতে জল থাকলে দ্বারকেশ্বর পার হতে সুরর্পানগর-ভাদুল রেল সেতুর উপরই তাঁরা নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা যাতায়াত করেন। এই রেলসেতু দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। গত ২০০৫ সালে এই সেতুর ওপরেই ঘটে গিয়েছিল এক ভয়ানক দুর্ঘটনা। যার স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি এলাকার মানুষরা।

দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে পিকনিক করতে আসা বাঁকুড়া শহরের আশ্রম পাড়ার একদল তরুণ-তরুণী রেল সেতু পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। কয়েকজন ট্রেনে কাটা পড়ে। কয়েকজন ভয়ে রেল সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচতে গিয়ে চোট পেয়ে মারা যান। তাই স্থায়ী সমাধান চেয়ে দ্বারকেশ্বর নদে সংযোগকারী সেতুর দাবি তুলে আসছিলেন এলাকাবাসী। সেই দাবি মেনে নিয়ে ফের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেতু নির্মাণের। এতে গ্রামবাসীরা ২০১৬ সালের কালো মেঘ দেখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *