রঘুপতি সারেঙ্গী, কোচবিহার, ২৬ সেপ্টেম্বর:
মহা-মহোপাধ্যায় পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় মহাশয় সমীপেষু।
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
মহোদয়,
আজ আপনার ২০০তম শুভ জন্মদিনে আপনাকে বিনম্র প্রণাম। শুনেছি, ‘বর্ণপরিচয়’ এর বর্ণমালাতে ড় এবং ঢ় এই বর্ণ দু’টির অন্তর্ভূক্তি আপনারই হাতে।
সংস্কৃত ব্যাকরণ কৌমুদি’র জনকও আপনি। পান্ডিত্য-সমাজসংস্কার-
দানশীলতার সেই চির- মানবিক
মুখের নাম তাই “দয়ারসাগর-বিদ্যাসাগর”–মানে স্বয়ং আপনি।
বলতে দ্বিধা নেই, ঊনিশ শতকের নারী শিক্ষা, বিধবা-বিবাহ সহ বাংলার নব-জাগরণ’র কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বও সেই আপনি।
আপনার এতো সব অসংখ্য রূপের সাথে আমাদের কমবেশি পরিচয় থাকলেও যে সত্বাটির সাথে অনেকেরই পরিচয় গড়ে ওঠে নি তা হল.
ডাঃ আই.সি.বন্দোপাধ্যায় নন্-রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ–এই পরিচয়টি।
জানা যায়, মহাশয় আপনি নাকি বহুদিন আধ-কপালি মাথা-যন্ত্রনাতে কষ্ট পেতেন। সব চেষ্টা বিফলে যেতে শেষে, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী বাবু রাজেন্দ্রলাল দত্তের স্মরণে এসে আপনি সারাজীবনের জন্য সেরে ওঠেন। তৎকালীন প্রখ্যাত এলোপ্যাথ ডা: মহেন্দ্রলাল সরকারের সাথেও আপনার সখ্যতা বহুজন বিদিত। এবার শুরু করলেন, অর্গানন এর দার্শনিক সত্যের সাথে মেটিরিয়া’র অভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক প্রমানকে তন্ন তন্ন করে বুঝে, প্রজ্ঞার গভীরে গিয়ে অধ্যয়ন। আর তার অবশ্যম্ভাবী পরিনামে অবিভক্ত মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামের ধনী- দরিদ্র ভেদে আপামর জনসাধারণ ৩৮টা বছর ধরে পেয়েছিল টানা হোমিওপ্যাথি পরিসেবার সুযোগ। শুধুই কি তাই? ১৮৭৩ থেকে ১৮৯১ পর্যন্ত একটানা ১৮ টা বছর নিঃশুল্ক হোমিওপ্যাথি পরিসেবার সূযোগ পেয়েছিলেন বর্তমান ঝাড়খণ্ডের অধিকাংশ জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন–সে তো প্যাথি’র সাথে মানুষকে ভালোবেসেই।
ছোটভাই, ঈশানচন্দ্র’কে প্রথামাফিক সুশিক্ষিত একজন হোমিওপ্যাথ গড়তে চাইছিলেন আপনি।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ব-বিদ্যালয়ের যাদুঘরে রাখা ডায়েরিতেই রেখে গেছেন হোমিওপ্যাথিকে সমাজে জনপ্রিয় করতে আপনার অনবদ্য সাক্ষর।
হে মণীষী!
অত্যন্ত আশা ও আনন্দের কথা আজ শোনাই। শুনুন,
সারা পৃথিবী কোভিড জ্বরে কম্পিত হলেও ভারত নামের ভূখন্ডে লোকসভা ও রাজ্যসভাতে
পূর্ণ-সম্মতি পেয়ে নতুন জাতীয় হোমিওপ্যাথিক বিল,২০২০ মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের অনুমতির অপেক্ষায়।
আর, তা ঠিক আপনার আগমনের এই ২০০ তম শুভ জন্মবর্ষে।
কাকতালীয় ভাবে হলেও এই দু’য়ের মধ্যে কোথাও যেন একটা কিছু মিল খুঁজে পাচ্ছি আমি। সেই কোন ছোটোবেলায় শুনেছিলাম, ভাগ করলে আনন্দ নাকি আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। আর সে কারণেই হয়তো বা এই ব্যক্তিগত চিঠি।
যেখানেই থাকুন সুস্থ-সুন্দর মনে, করোনা মুক্ত দে… থুড়ি, শুধু মন থাকলে যে করোনা হয় না এটাই আমি ভুলে গেছি! মাফ করবেন।
পুনরায় প্রণাম রইলো।
ইতি
আপনারই হাত ধরে হেঁটে চলা এক গুণমুগ্ধ পথিক।